আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কাগজের দাম বাড়ায় হুমকিতে প্রকাশনা শিল্প

কাগজের দাম বাড়ায় হুমকিতে প্রকাশনা শিল্প
কাগজের দাম বাড়ায় সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পও পড়েছে হুমকির মুখে। বইমেলা সামনে রেখে বইয়ের দাম বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো হয়নি। কিন্তু নতুন সব বইয়েই এবার দাম বাড়ানো হচ্ছে। প্রকাশকদের অনেকেই নতুন বইয়ে ৪০-৫০ শতাংশ বেশি দাম নির্ধারণ করছেন। আবার অনেকে পাঠক হারানোর ভয়ে দাম কিছুটা বাড়িয়ে সহনীয় পর্যায়ে রাখছেন। কেউ আবার ভালো পাণ্ডুলিপি না ছাপিয়ে জমা রেখেছেন। কাগজের দাম সহনীয় হলে এসব বই ছাপাবেন তারা। বইয়ের দাম বাড়ায় এবারের মেলায় পাঠক হারানোর শঙ্কায় প্রকাশকরা। চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফ্রেশ পেপার মিলের ১ টন ৮০ ও ১০০ জিএসএম কাগজ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। একই মানের পারটেক্স কাগজের টন ১ লাখ ৫৫ হাজার, বসুন্ধরা ১ লাখ ৫৩ হাজার এবং লিপি পেপার ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮০ জিএসএম ফ্রেশ ও লিপি কাগজের রিম ৩ হাজার ১৯০, পারটেক্স ৩ হাজার ৩০০ এবং বসুন্ধরা ৩ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর ১০০ জিএসএম কাগজের রিম ফ্রেশ ও লিপির ৪ হাজার ৫০, পারটেক্স ৪ হাজার ২০০ এবং বসুন্ধরা ৪ হাজার ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ফ্রেশ পেপার মিলের ১ টন ৮০ ও ১০০ জিএসএম কাগজের দাম ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। একই মানের পারটেক্স কাগজের টন ১ লাখ ২৫ হাজার, বসুন্ধরা ১ লাখ ২৩ হাজার এবং লিপি পেপার ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ৮০ জিএসএম ফ্রেশ কাগজের রিম ২ হাজার ৫৫০, পারটেক্স ২ হাজার ৬৬০, বসুন্ধরা ২ হাজার ৬২০ এবং লিপি কাগজের দাম ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা। আর ১০০ জিএসএম কাগজের রিম ফ্রেশ ৩ হাজার ২৪৫, পারটেক্স ৩ হাজার ৩৮০, বসুন্ধরা ৩ হাজার ৩৩০ এবং লিপি কাগজ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। নয়াবাজারের কাগজ বিক্রেতারা বলছেন, বছরের এই সময়ে অন্যবারের তুলনায় অর্ধেক কাগজ এসেছে। উৎপাদন কম থাকায় পেপার মিলগুলো কাগজ দিতে পারছে না। গ্রাহকের চাহিদা থাকলেও তারা সরবরাহ করতে পারছে না। শরিফ পেপার হাউসের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য বছর ৩ জানুয়ারির মধ্যে তিন গাড়ি কাগজ এলেও এবার একটিও আসেনি। মিল থেকে জানিয়েছে, তাদের কাছে কাগজ নেই।’ প্রকাশক, প্রেস মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে কাগজের দাম। তারা গত বছর বই ছাপানোর জন্য এক রিম কাগজ কিনতেন ১ হাজার ৮৫০ থেকে ২ হাজার টাকায়। অথচ এর দাম এখন সাড়ে ৩ হাজার টাকার বেশি। একটি প্লেটের দাম আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকা, এখন ৩০০। ২ পাউন্ডের প্রতি কৌটা কালির দাম ছিল ৬০০, এখন ৮০০ টাকার বেশি। তিন লিটারের ১২০ টাকার আঠার দাম এখন ১৬০। এর সঙ্গে বাঁধাই, পরিবহন, প্রুফ রিডিং, কম্পোজ, পেস্টিং, শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে। ফলে ২০ ফর্মার যে বই গত বছর ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, এবার তা হবে ৬০০ টাকা। প্রকাশকরা বলছেন, এই বইমেলা পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। যারা পাঁচটি বই কিনত তারা কিনবে দুই বা তিনটি। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ হাজার নতুন বই মেলায় আসে। তবে এবার আসবে দেড় থেকে দুই হাজার নতুন বই। নতুন লেখকদের বই কমবে। প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ। বইয়ের উৎপাদন কমে গেলে তারা অর্থনৈতিক চাপে পড়বে। সব মিলিয়ে প্রকাশকদের চোখে এবারের বইমেলা হবে সংকটের বইমেলা। উৎস প্রকাশনীর প্রকাশক মোস্তফা সেলিম কালবেলা বলেন, ‘শুধু কাগজের দামই নয়, মুদ্রণ উপকরণ, প্লেট, লেমিনেশন, বাঁধাইসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। এর মানে হলো, বই ছাপলে মূল্য দ্বিগুণ করে আমাদের পোষাতে হবে। এবার ছোট-বড় সব প্রকাশক হাত গুটিয়ে বসে আছেন।’ তিনি বলেন, ‘এবার আমরা গত বছরের অর্ধেক বই বের করব। অনেক পাণ্ডুলিপি তৈরি থাকলেও ছাপাব না। কাগজের দাম স্বাভাবিক বা যুক্তিসংগতভাবে বৃদ্ধি হলে ছাপানো হবে।’ বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি ও অন্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এবার বই প্রকাশ ১৫-২০ শতাংশ কমতে পারে। চেষ্টা করছি দাম সহনীয় রাখতে। পাঠকের বই কেনায়ও এবার প্রভাব পড়বে। আমরাও এ নিয়ে চিন্তিত।’ বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘অন্য বছর নতুন লেখকদের উৎসাহ দিলেও এবার সে সংখ্যা কমিয়ে আনতে হয়েছে। ফলে নতুন বইও বাজারে কম আসবে। এটা মনে হয় শুভ লক্ষণ হবে। যখন প্রকাশকদের বই প্রকাশের সামর্থ্য কমে আসবে, তখন সে নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয় বইগুলোই প্রকাশ করবে।’ তিনি বলেন, ‘বইয়ের দাম প্রকাশকরা অপরিকল্পিতভাবে বাড়ালে পাঠক কমার শঙ্কা আছে। এই বইমেলা প্রকাশকদের জন্য একটা পরীক্ষাও বলা যায়। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের বিবেচনারও একটা পরীক্ষা এবার হবে।’ এদিকে সৃজনশীল বইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহায়ক বইয়ের দামও বাড়বে। সেজন্য বাতিল কাগজ (ওয়েস্ট পেপার) আমদানির সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল কালবেলাকে বলেন, ‘কাগজ সংকটের কারণে এবার সৃজনশীল বইয়ের পাশাপাশি বাড়বে স্বাভাবিক ও সহায়ক বইয়ের দামও। বাংলাদেশে বাতিল কাগজ নেই। এলসি করতে না পারায় মিল মালিকরা এসব কাগজ আনতে পারছেন না। সংকট কাটাতে ছাপানোর সামগ্রী আমদানি করার সুযোগ দিতে হবে। এই সুযোগ দিলে আশা করি, কাগজের সংকট অনেকটাই কমবে। তাতে দাম একেবারে হয়তো কমবে না, তবে সহনীয় পর্যায়ে আসবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাদ্রাসার সভাপতি হতে পারবেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবীরাও

ফেসবুকে ‘স্যাড’ রিঅ্যাক্ট দেওয়ায় ৫ কর্মকর্তাকে শোকজ

সারা দেশে কখন, কোথায় হবে বজ্রবৃষ্টি জানালেন আবহাওয়াবিদ

রায়ে অসন্তুষ্ট সেই শিশুর পরিবার

এমআরএ ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

গভীর রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসার সামনে নুরের লাইভ

একই মাঠে মেসি-ইয়ামাল, ভক্তদের স্বপ্ন এবার সত্যি হওয়ার পথে!

মধ্যপ্রাচ্য সফরে মাত্র এক ফোঁটা তেল পেলেন ট্রাম্প

আমিরাত-বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজ দেখবেন যেভাবে

ফিফা নিষেধাজ্ঞার ভয়ে সুপ্রিম কোর্টে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন!

১০

হাসপাতাল থেকে ওয়ার্ড বয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার 

১১

দলকে প্রমোশন এনে দিয়ে ভেড়া পুরস্কার পেলেন কোচ

১২

স্ত্রীকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া স্বামী গ্রেপ্তার 

১৩

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

১৪

৫০ লাখ এপেক্স রিওয়ার্ডস মেম্বারের মাইলফলক উদযাপন

১৫

স্লোগান, মিছিলে নগরভবনের সামনে ইশরাকের অনুসারীরা

১৬

যৌতুক নিয়ে হট্টগোল, বিয়ের আসর থেকে বর আটক

১৭

বায়ুদূষণের শীর্ষে লাহোর, ঢাকার অবস্থান কত

১৮

আজ সরকারি অফিস-ব্যাংক খোলা 

১৯

মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যায় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড

২০
X