শফিকুল ইসলাম
১৭ মে ২০২৩, ০৮:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তৃণমূলে মাঠ গরমের কৌশল বিএনপির

সরকারের পদত্যাগ দাবিতে চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে সুফল পেতে নানামুখী কৌশল নিয়েছে মাঠের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির হাইকমান্ড। সেই লক্ষ্যে তৃণমূলের মাঠ গরম রাখতে ছয় দিনের নতুন কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। কৌশলের অংশ হিসেবে এবার একযোগে কর্মসূচি না করে একেকদিন একেক মহানগর, বিভাগ ও জেলায় জনসমাবেশ করবে বিএনপি। একই সঙ্গে দ্রুত অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনের মাধ্যমে সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে চায় দলের হাইকমান্ড।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব এলাকায় মূল দল বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, তা মিটিয়ে ফেলতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব জেলা-উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি নেই, সেখানে দ্রুত কমিটি পুনর্গঠন এবং যেখানে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক নেই, সেখানে সাংগঠনিক নিয়মে অধস্তন বা নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত ৪ মে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরে পদযাত্রা ও ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।

টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় বিরতির পর গত শনিবার চার পর্বে ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশ ঘোষণা করে বিএনপি। ‘গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে’ এসব কর্মসূচি শেষ হবে ২৭ মে। কর্মসূচি সফলে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। প্রায় সব কর্মসূচিতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একক কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছয় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আজ বুধবার দুপুর ২টায় বাসাবো খেলার মাঠ থেকে মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত পদযাত্রা। একই সময়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে বাড্ডা সুবাস্তু ভ্যালি টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু করে রামপুরা আবুল হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা হবে। আগামী শুক্রবার দুপুর ২টায় ঢাকা উত্তর বিএনপির উদ্যোগে শ্যামলী ক্লাব মাঠে এবং ঢাকা দক্ষিণের উদ্যোগে আগামী শনিবার দুপুর ২টায় মতিঝিলের পীরজঙ্গী মাজারের সামনে জনসমাবেশ হবে। এরপর ২৩ মে ২টায় ধানমন্ডি থেকে দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এবং একইদিনে একই সময়ে ঢাকা উত্তরের উদ্যোগে গাবতলী থেকে শ্যামলী পর্যন্ত পদযাত্রা হবে। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণের উদ্যোগে ২৬ মে দুপুর ২টায় যাত্রাবাড়ীতে এবং ঢাকা উত্তরের উদ্যোগে ২৭ মে রাজধানীর উত্তরায় জনসমাবেশ হবে।

এদিকে রাজধানীতে আন্দোলন জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। কর্মসূচি সর্বাত্মক সফলের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন মহানগরীর নেতারা। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার পাশাপাশি মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। গত সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় দলের ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব, অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। একইদিনে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট জেলার নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনের বার্তা দিয়ে তা সফলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, অব্যাহত লোডশেডিং, নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে জনগণ অতিষ্ঠ। তারা বিএনপির আন্দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে। সময়-সুযোগ পেলে তারাও মাঠে নামবেন। ফলে আবারও তৃণমূলের এসব কর্মসূচিতে জনসমাগম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। এজন্য যাতে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন, সেই প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলমান আন্দোলনকে একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনে পরিণত করবেন। এ অবস্থায় আপাতত একক কর্মসূচি দিয়েই মাঠে থাকবে বিএনপি। সমমনা দল ও জোটও পৃথক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে। জুনের মাঝামাঝিতে ফের যুগপৎ আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা আছে। এ সময়ের মধ্যে নিজেদের দূরত্ব কমিয়ে ঐক্যের ওপর জোর দেবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। জনসমাবেশ শেষে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৩ দিনের কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, চলমান আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়তে আবারও শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। অতীতের বিভাগীয় গণসমাবেশের মতোই দেশের মানুষ চলমান কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে এ সরকারকে বিদায়ের লালকার্ড দেখাবে।

সম্প্রতি লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে দেশে ফিরেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তিনি গতকাল কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনের নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ হয় না। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে আবারও তৃণমূলে কর্মসূচি দিয়েছি। এভাবে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি করতে চাই। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের জন্যই আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এদিকে চলমান আন্দোলন সফলে যেসব জেলা, উপজেলা বা থানায় নেতৃত্বের শূন্যতা রয়েছে, তা পূরণ করছে বিএনপি। একাধিক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত বহু আগেই নিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে গত সোমবার গাইবান্ধা সদর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার ওমর ফারুক সেল ও ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান সরকার মৃত্যুবরণ করায় দুটি পদ শূন্য হয়। কমিটির ক্রমানুসারে শূন্যপদে ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোর্শেদ হাবিব সোহেলকে মনোনীত করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার দুর্নীতির মামলায় কারাগারে বন্দি প্রায় দেড় মাস। তার বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে পণ্য আমদানি করে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২১টি মামলার মধ্যে অপু চাকলাদার ১১টি মামলার এজাহারনামীয় আসামি। গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিদেশে পালানোর চেষ্টাকালে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। লৌহজংয়ের স্থানীয় নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও আন্দোলন সফলের লক্ষ্যে অপু চাকলাদারকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে কাউকে ভারপ্রাপ্ত বা পূর্ণাঙ্গ সদস্যসচিব করার দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রে। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এভাবে যত দ্রুত সম্ভব পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জায়গায়ও কমিটি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা হবে।

বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক কালবেলাকে বলেন, যেখানে নেতৃত্ব শূন্যতা আছে, সেগুলো দ্রুত পূরণ করার সিদ্ধান্ত আগের। পাশাপাশি কমিটি গঠন বা হালনাগাদ চলমান। যেখানে কমিটি নিয়ে সংকট আছে, সেখানে বিভেদ নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা জণগণের গলাকাটার সুযোগ পায়’

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন অভিযোগের জবাব দিলেন শিবলী সাদিক

ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার মতো অর্থ নেই যুক্তরাষ্ট্রের

এবারও সেরা করদাতা জর্দা ব্যবসায়ী কাউছ মিয়া

আবারও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ

গানের স্বত্ব নিয়ে শাফিন-হামিনের দ্বন্দ্ব

শাহজাহান ওমরের বাড়ির বিএনপি কার্যালয় এখন আ.লীগের নির্বাচনী অফিস

সেমিফাইনালে কিংস-মোহামেডান

এমপি নির্বাচিত হলেও পিএসএলে খেলবেন সাকিব

জোট ও জাপার সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে যে বার্তা দিলেন আমু

১০

ফেনীতে নৌকার প্রার্থী আলাউদ্দিন নাসিমকে শোকজ

১১

শাকিব শিক্ষিত নন, আমি অনেক শিক্ষিত : জায়েদ খান

১২

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২৩ ফেব্রুয়ারি

১৩

আন্দোলনকে আরও বেগবান করার আহ্বান রবের

১৪

সরকারি কর্মকর্তাকে পেটানোর ঘটনা ৫০ হাজারে দফারফা

১৫

‘ভাড়া করা লোক দিয়ে গাড়িতে আগুন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না’

১৬

তৈমূরের আয় বেড়েছে দেড় গুণ, স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৬৬ গুণ

১৭

আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল বললেন, মুজিবুল হক চুন্নু জামানত হারাবেন

১৮

উপকূল অতিক্রম করেছে ‘মিগজাউম’, বাড়ল সতর্ক সংকেত

১৯

এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার কর ফাঁকি, দ্বৈত নাগরিক হয়েও হতে চান এমপি

২০
X