সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ০৮:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কারণ অনুসন্ধানে কমিশন গঠন করা হোক

কারণ অনুসন্ধানে কমিশন গঠন করা হোক
সংখ্যালঘুদের অনুপাত কমছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। আদমশুমারিসহ এ-সংক্রান্ত আরও কিছু জরিপ সেটাই প্রমাণ করে। তবে কত কমেছে সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কেন তারা ধারাবাহিকভাবে সংখ্যায় কমেছে এবং কমে যাচ্ছে—এটিই হচ্ছে বড় প্রশ্ন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কল্যাণে কাজ করা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অনুপাত ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়ার কারণ কী, কেন তারা হারিয়ে যাচ্ছে—সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। তারা জানান, সংখ্যালঘুরা কেন হারিয়ে গেছে তা নিরূপণের কাজটি জরুরি। যদিও সেই সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা সব সরকারের মধ্যেই রয়েছে ঘাটতি। বাংলাদেশ যাতে বাংলাদেশ হিসেবে তার অস্তিত্ব মর্যাদার সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে পারে, সেই জন্য এ বিষয়ে একটা কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা জানি, স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘুর সংখ্যা যে হারে কমেছে, এর মধ্যে সনাতন সম্প্রদায়ের চিত্র সবচেয়ে ভয়াবহ। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি অনুসারে, ১৯৭৪ সালে মোট জনসংখ্যার ১৩.৫ শতাংশ ছিল হিন্দু। এরপর ১৯৮১ সালে ১২.১ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ১০.৫, ২০০১ সালে ৯.৩, ২০১১ সালে ৮.৫ এবং সর্বশেষ আদমশুমারিতে ২০২২ সালে ৭.৯৫ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠী। এই হিসাবে দেখা যায় বাংলাদেশে বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং অন্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা কমেনি, প্রায় একই আছে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত তার ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ নামের গবেষণা গ্রন্থে বলেছেন, ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নিরুদ্দেশ হয়েছেন। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ছয়টি কারণ তিনি চিহ্নিত করেছেন, তা হচ্ছে—এই অঞ্চলে মুসলমানদের ফার্টেইলিটি রেট বেশি, ’৬৪ সালের দাঙ্গা, ’৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, এনিমি প্রোপার্টি অ্যাক্ট, ভেস্টেড প্রোপার্টি অ্যাক্ট এবং নিরাপত্তাহীনতা। আমরা জানি, দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নানা রকমের নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা একটি নিয়মিত বিষয়। যে কোনো নির্বাচন বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে এসব ঘটনা আরও বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরব্যাপী মন্দির ভাঙচুর, বিভিন্ন হুমকি-ধমকি, তাদের জমির ওপর প্রভাবশালীদের সর্বগ্রাসী নজর ইত্যাদি তো রয়েছেই। পরিতাপের বিষয় হলো বিভিন্ন সময়ে এসব অপ্রীতিকর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের কোনো ব্যবস্থা হয় না। এই বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা আবশ্যক। আর এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হলে এ বিষয়ক একটি স্বতন্ত্র কমিশনের বিকল্প নেই। কারণ একটি কমিশন গঠিত হলে এ-সংক্রান্ত তদন্তের কাজ সুষ্ঠুভাবে করা সহজ হবে। সেইসঙ্গে কেন, কখন, কীভাবে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সংখ্যা কমছে, তা নিরূপণ করা সহজতর হবে। আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় সবার জন্য দেশ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। সেই বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এ দাবির বাস্তবায়ন করা হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসুতে ভোট কারচুপির অভিযোগে সিসিটিভি যাচাই, উঠে এলো যে তথ্য

দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি, আটকা ১৭৮ যাত্রী

ভারতে পালানোর সময় সাবেক এমপির ব্যক্তিগত সহকারী গ্রেপ্তার

ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা

ইসলামের পথে তামিম মৃধা, যা বলছেন রিজিক নিয়ে

নেপালে জনরোষের শিকার রিপাবলিক বাংলার সাংবাদিক

র‌্যাব পরিচয়ে ছিনতাইকালে শ্রমিকদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

ইবনে সিনা হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর

শেকলবন্দি আকাশ ফিরতে চায় পড়ার টেবিলে

ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অবরোধ

১০

জুলাইয়ে হত্যা মামলা / শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

১১

শেখ হাসিনার আরও দুটি লকার জব্দ

১২

আফগান বধের পর সুখবর পেলেন বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার

১৩

২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জকসু নীতিমালা পাসের দাবি জবি শিবিরের

১৪

যেভাবে কনটেন্ট ক্রিয়েটর থেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন হানিয়া

১৫

কাতারে হামলা নিয়ে বিস্ফোরক বার্তা নেতানিয়াহুর

১৬

ট্রাক-বাস সংঘর্ষে প্রাণ গেল চালকের

১৭

এশিয়া কাপ জিতলেও ট্রফি হাতে নেবে না ভারত, নেপথ্যে যে কারণ

১৮

সিরাজগঞ্জে হত্যা মামলায় চারজনের যাবজ্জীবন

১৯

গাজায় ৭৫০ বছরের পুরোনো মসজিদ ধ্বংস করল ইসরায়েল

২০
X