সম্পাদক ও প্রকাশক : সন্তোষ শর্মা । বিভাগীয় প্রধান (অনলাইন): পলাশ মাহমুদ
কালবেলা মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স, ৪৪/১, রহিম স্কয়ার, নিউমার্কেট, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং ২৮/বি, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা, শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত।
বছরের পর বছর ন্যূনতম বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশ তথা দফাদার ও মহল্লাদার। ন্যায়বিচার পেতে ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন তারা। তাদের করা রিটের শুনানি করে ২০১৯ সালে মহল্লাদারদের জাতীয় বেতন স্কেলের ২০তম গ্রেডে এবং দফাদারদের ১৯তম গ্রেডে বেতন-ভাতা প্রদানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গ্রাম পুলিশ সদস্যদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার ঘটে হাইকোর্টের রায়ে। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে। প্রায় আড়াই বছর ধরে আপিল বিভাগের আদেশে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের আর শুনানি হচ্ছে না। ফলে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের প্রতীক্ষার অবসানও ঘটছে না।
জানতে চাওয়া হলে রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব কালবেলাকে বলেন, রিট করার সময় গবেষণা করে দেখেছি, ২৩০ বছর আগে থেকেই গ্রাম পুলিশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তখন থেকেই তারা অবহেলিত। শতবছর অতিবাহিত হলেও তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি। তার পরও তারা প্রান্তিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বিনিময়ে সামান্য বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। রিট করার সময় তারা পেতেন ৩ হাজার ৩০০ টাকা। আর এখন পান ৬ হাজার ৫০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করেন। বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনায় হলেও দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।
ব্যারিস্টার পল্লব আরও বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন। করোনার কারণে লম্বা সময় আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরপর একটি বেঞ্চে আপিল বিভাগে বিচার কার্যক্রম চলত। আর এখন দুটি বেঞ্চে বিচার চলছে। দ্রুত শুনানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, দ্রুতই রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি হবে। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশ যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা শিগগির পূরণ হবে। তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর কেটে যাবে। তারা তাদের ভাগ্য উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখেছেন আপিল বিভাগের রায়ে তা অচিরেই পূরণ হবে।
এর আগে মহল্লাদার ও দফাদারদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা চেয়ে ২০১৭ সালে রিট করেন গ্রাম পুলিশের ৩৫৫ সদস্য। ওই রিটের শুনানি শেষে গ্রাম পুলিশের মধ্যে দফাদার পদধারীদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা ২০০৯ সালে ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেলের (বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫) ১৯তম গ্রেড এবং মহল্লাদারদের ২০তম গ্রেডে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ২০১৯ সালের ১৫ ও ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেছিলেন।
এই রায়ের লিখিত অনুলিপি (পূর্ণাঙ্গ রায়) ২০২০ সালের জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ১৮ পৃষ্ঠার ওই পূর্ণাঙ্গ রায়ে গ্রাম পুলিশদের ২০১১ সালের ২ জুন থেকে সুবিধা দিতে বলা হয়। রায়ে ২০১১ সালের ২ জুনের পর স্থানীয় সরকার কর্মচারী চাকরি বিধিমালা-২০১১ বহির্ভূতভাবে গ্রাম পুলিশ পদে যে কোনো নিয়োগ অবৈধ ও বাতিল হবে বলে উল্লেখ করা হয়। হাইকোর্টের রায়টি বাস্তবায়ন করে ২০২০ সালের মার্চে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
হাইকোর্ট রায়ে বলেন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০১১ জারির মধ্য দিয়ে সব মহল্লাদার ও দফাদার ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারী হিসেবে গণ্য হয়ে জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত হন। কিন্তু ওই বিধিমালা কার্যকর না করে চার বছর পর গ্রাম বাহিনীর গঠন ও চাকরির শর্তাবলি বিষয়ে আরেকটি বিধিমালা জারি করা হয়। এ বিধিমালাটি কেন জারি করা হয়েছিল, তা আদালতের কাছে বোধগম্য নয়। হাইকোর্ট রায়ে বলেন, ২০১১ সালের বিধিমালা কার্যকর না করে ২০১৫ সালের নতুন এই বিধিমালা প্রণয়ন বেআইনি ও এখতিয়ারবহির্ভূত।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাষ্ট্র নিজের আইন নিজে মেনে চলবে। রাষ্ট্র কখনো নিজের প্রণীত আইন ও বিধি ভঙ্গ করবে না। আইন সবার জন্য সমান। রাষ্ট্র ও নাগরিকের কোনো পার্থক্য নেই। আইন মোতাবেক চলা যেমনই নাগরিকের জন্য কর্তব্য তেমনি রাষ্ট্রের জন্যও তা সমভাবে প্রযোজ্য। এটিই আইনের শাসন। বর্তমান এই মামলায় গ্রাম পুলিশ সদস্যদের তাদের আইনত প্রাপ্যতা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত করে আসছে।
রায়ে আরও বলা হয়, সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ মোতাবেক আইনানুযায়ী ব্যতীত কোনো ব্যক্তিকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে তথা ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে তথা ন্যায্য প্রত্যাশা থেকে তথা আইনসম্মত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। এই রিট মামলায় গ্রাম পুলিশ সদস্যদের ন্যায্য অধিকার হলো বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী বেতন-ভাতাদি পাওয়া। কিন্তু তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, তাদের সঙ্গে বিবাদীরা আইনানুযায়ী আচরণ করেননি। বিবাদীদের এমন কর্ম ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।
এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। পরে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। এরপর ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল করতে বলেন। বর্তমানে রাষ্ট্রপক্ষের করা নিয়মিত আপিল বিচারাধীন সর্বোচ্চ আদালতে। এই আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি রিটকারীদেরও।
রিট বাস্তবায়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি উজ্জল খান কালবেলাকে বলেন, আমরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অনেক কাজ করছি। কিন্তু যে বেতন-ভাতা পাচ্ছি তা দিয়ে চলতে পারি না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। অনেক সদস্য পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। ডাল-ভাতও জোগাড় করতে পারছেন না। হাইকোর্টের রায়ে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা স্বপ্ন দেখেতে শুরু করেছেন। এই স্বপ্ন দ্রুত পূরণে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করেন।
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
পপুলার ফার্মায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
১
পুতিন-মোদি বৈঠক, পারস্পরিক সাহায্যে জোর
২
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা
৩
আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা
৪
কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে
৫
তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত, খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
৬
২৩ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি
৭
বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
৮
‘সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে’
৯
ইউএনএফপিএ এবং জাপান সরকারের মাঝে ৪০ কোটি টাকার সহায়তা চুক্তি
১০
‘রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে কোনো চক্রান্ত করার সুযোগ দেওয়া হবে না’
১১
বুলগেরিয়ায় পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর
১২
ভিনির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে রিয়ালের অসাধারণ জয়
১৩
ঘূর্ণিঝড় ডানার তাণ্ডব চলবে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত
১৪
টানা দ্বিতীয় হারে এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায়
১৫
বঙ্গভবন এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের সরে যাওয়ার আহ্বান হাসনাত-সারজিসের
১৬
বাংলাদেশ সিরিজের জন্য আফগানিস্তানের দল ঘোষণা
১৭
প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব হলেন মোজাম্মেল হক
১৮
প্রধান উপদেষ্টা সুস্থ আছেন, গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ
১৯
যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্পাদক কয়ছরকে জগন্নাথপুরে গণসংবর্ধনা