দিনবদলের স্বপ্নে বিভোর

দুরন্ত তারুণ্য যদি ঘরের খেয়ে বনের মোষ না তাড়াত, তাহলে পৃথিবী এত সুন্দর হতো না। সৌহার্দ্যময় পৃথিবী গড়তে ‘চলো বন্ধু বদলে যাই, মানবতার বিশ্ব চাই’—স্লোগানকে মননে ধারণ করে একদল তরুণ-প্রাণ ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে নবোদ্যম ফাউন্ডেশন-এর। লিখেছেন মো. আশিকুর রহমান ডাস্টবিন থেকে এটা ওটা কুড়িয়ে দিন চলত আসমার। যে বয়সে বই খাতা হাতে থাকার কথা, সে বয়সে ভারী কাজও করতে হয় থাকে। সেই আসমার ভাগ্য বদলে গেল নবোদ্যম নামের একটি ফাউন্ডেশনের ‘সেভ দ্য টুমরো স্কুল’-এ এসে। আসমা এখন ডাক্তার হতে চায়। দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে চায় সে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদানই নবোদ্যম ফাউন্ডেশনের অন্যতম উদ্দেশ্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে ফাউন্ডেশনটির সেভ দ্য টুমরো স্কুল। রাজধানীর হাইকোর্টের সামনে থেকে শুরু করে এ স্কুল আছে ভৈরব উপজেলার বেদেপল্লিতেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যাত্রা শুরু হয় ‘পদ্ম স্কুল’। স্কুল রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও। সুনামগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যনগরে একাধিক স্কুলের পাশাপাশি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়ও কার্যক্রম চলমান। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম চলছে। সমাজের ছিন্নমূল মানুষ যেন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, এ জন্য নিয়মিতভাবে খাদ্য, নিরাপদ পানি, ঈদের সময়ে ঈদ উপহার, শীতে শীতবস্ত্র বিতরণ সংগঠনটির নিয়মিত কাজ। বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও নেয় সংগঠনটি। আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে মুমূর্ষু রোগীদের রক্তের চাহিদা মেটাতে কাজ করছে নবোদ্যম ব্লাড ফাইটার্স। এর জন্য রয়েছে নিজস্ব একটি অ্যাপ। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শরীফ ওবায়েদুল্লাহ জানালেন, সদস্যরা প্রতিদিন এক টাকা সংগঠনকে প্রদান করবে, এমন একটা ভাবনা থেকে তৈরি হয় তহবিল। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও করোনাভাইরাসজনিত মানবিক বিপর্যয়কালীন ও দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি। দেশের আটটি বিভাগে ১০ সহস্রাধিক মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৬০০ পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত তিন শতাধিক পরিবারকে সহযোগিতার পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭০০ পরিবারকে সহযোগিতা করেছে। দুর্গত এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছে স্কুল, নির্মাণ করে দিয়েছে আবাসস্থল, উপহার হিসেবে দিয়েছে নৌকা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ‘অ্যাডমিশন হেল্প ডেস্ক’ স্থাপন করা হয়। স্বেচ্ছাসেবকরা পরীক্ষার্থীদের তথ্য ও দিকনির্দেশনার পাশাপাশি পানি ও খাবার স্যালাইন সরবরাহ করে এবং বই, মোবাইল, ব্যাগ জমা রাখার ব্যবস্থা করে থাকে। নবোদ্যম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শরীফ ওবায়দুল্লাহ বলেন, কিছু ব্যতিক্রম মানুষ রয়েছেন, যারা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। তাদের জীবনবোধের কারণেই সভ্যতা কালো থেকে আলোর দিকে, মন্দ থেকে ভালোর দিকে এগিয়ে চলে। তাদের কথা মনে রেখেই আমরা নিজ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য অন্যরকম স্বপ্ন দেখতে সাহস পাই। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, স্থায়ী কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।