সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৫২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সমাজ বিপ্লবের জন্য চাই সংস্কৃতির চর্চা

সমাজ বিপ্লবের জন্য চাই সংস্কৃতির চর্চা
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে রাজনৈতিক আবহাওয়া ততই উষ্ণ হয়ে উঠেছে। এবং অস্বাভাবিক রকমের সব ঘটনাও ঘটছে। ওদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়েছেন যে, এবার খেলা হবে জোরদার। ঘোষণা দিয়েই একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন মনে হয়। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বলা শুরু করেছে খেলা হবে কী করে, খেলার মাঠটা কোথায়? মাঠ তো সরকারি দলের দখলে। তারা আরও বলছে মাঠ খোলা না থাকলে, অর্থাৎ নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে, সরকারের ‘নিয়ন্ত্রণাধীন’ নির্বাচনের পথ তারা মাড়াবেই না। আওয়ামী লীগ নেতা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, খেলার কথাটা পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন এবং মানুষ কথাটাকে অপছন্দ করেনি। তা যাই বলুন, পার্থক্য তো রয়েই গেল। মমতা তো লড়ছিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে, বিজেপি কেন্দ্রীয় শাসনের কর্তা এবং সে-কারণে প্রবল প্রতিপক্ষ। আওয়ামী লীগ খেলবে কার বিরুদ্ধে, বিএনপিকে যদি মাঠে না-ই পাওয়া যায়? খালি মাঠে গোল দেওয়া? সে-খেলা কি জমবে? জনগণের দিক থেকে অবশ্য একটা শঙ্কা থেকেই যায়। সেটা হলো খেলা যদি শেষ পর্যন্ত হয়ও, তবে সেটা তো হবে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য যে-খেলা, ফুটবল খেলা, সেটার মতোই। খেলবে দুই দল, কিন্তু ফুটবলটি আসবে কোথা থেকে? জনগণই কি ফুটবল হয়ে যাবে? খেলোয়াড়দের প্রতিদ্বন্দ্বিতার? সে যাই হোক, নির্বাচন যদি সর্বাধিক পরিমাণে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হয় তাহলেও কি সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে মেহনতি মানুষের, কপাল ফিরবে? তারা কি ভালোভাবে বাঁচতে পারবে? কই, ইতিহাস তো তেমন সাক্ষ্য দেয় না। খুব গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিহাস-সৃষ্টিকারী একটা নির্বাচন হয়েছিল ১৯৪৬-এ; তাতে মেহনতিদের ভাগ্য বদলাবে কী, উল্টো খারাপই হয়েছে। এর পর ১৯৭০-এর নির্বাচন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, পূর্ববঙ্গকে স্বাধীন করে দিয়েছে। কিন্তু গণহত্যা কি ঘটেনি এবং মেহনতিদের দুর্দশা কি ঘুচেছে? তাহলে? নির্বাচন যে বুর্জোয়াদের খেলা, তা ফুটবল হোক কী ক্রিকেটই হোক বা অন্য কিছু হোক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই; ওই খেলায় মেহনতিরা কিছু উত্তেজনা পেতে পারে, এমনকি বুর্জোয়াদের ভাবসাব দেখে মেহনতিরা এমনও ভাবতে পারে যে, বুর্জোয়াদের নয়, মেহনতিদের হাতেই ক্ষমতা এসে গেছে কে জিতবে তা ঠিক করে দেওয়ার, কিন্তু সে আনন্দ নিতান্তই সাময়িক। অচিরেই বুঝবে তারা যে তাদের কপাল আগের মতোই ফাটা। জোড়া লাগেনি আদৌ। জোড়া কি লাগবে অভ্যুত্থানে? অভ্যুত্থানও তো হয়েছে। ঊনসত্তরে হয়েছে; হয়েছে নব্বইয়ে। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা তো বদলায়নি। বরং আরও পোক্ত ও গভীর হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে কেবল অভ্যুত্থানেও কুলাবে না; অভ্যুত্থান হওয়া চাই সামাজিক বিপ্লবের লক্ষ্যে। তার আভাস আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ওই বিপ্লব ছাড়া যে মুক্তির উপায় নেই সেটা স্বীকৃত সত্য। ইতিমধ্যে আমরা ‘উন্নতি’ করতে থাকব; যদিও তাতে সুখ আসবে না। মানুষ বেকার হবে। বেকার মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে আর ক্ষুধা মানুষকে বেআইনি তথা অপরাধী করে তুলবে। ধরা যাক কেউ চুরি করতে গেছে, সেই ‘চোর’ কিন্তু পুলিশকেই বরং মিত্র ভাববে, জনতাকে নয়। যেমনটা কদিন আগে বরিশালের একটি বাজারে এক মুদির দোকানে ঘটেছে। রাতের বেলা তালা ভেঙে লোকটা ঢুকেছিল দোকানের ভেতরে, কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে ঠিক করতে করতে এবং চোরাই মাল গোছাতে গোছাতে দেখে ভোর হয়ে এসেছে। ভয়ে দিশেহারা হয়ে সে তখন ৯৯৯-তে পুলিশকে ফোন করেছে; এসে যেন তাকে উদ্ধার করে। চোরের আতঙ্ক পুলিশকে যতটা নয়, জনতাকে ততোধিক। ধারণা করা অসংগত নয় যে, আরও অধিক পরিমাণে দেখা যাবে যে, উন্নতি মানুষকে নানাভাবে অমানুষ করে তুলছে। অতিশয় উন্নত এ ঢাকা শহরে এমনকি মানুষের একেবারে প্রাথমিক প্রয়োজনগুলোও মিটছে না। মলমূত্র ত্যাগের জন্য টয়লেট পর্যন্ত নেই। কদিন আগে বিশ্ব টয়লেট দিবস উদযাপিত হয়েছে; সে উপলক্ষে খোঁজ নিয়ে নাকি জানা গেছে, যে ১ কোটি ৭১ লাখ মানুষের বসবাস যেখানে, সেই ঢাকা শহরে পাবলিক টয়লেট রয়েছে মাত্র ১০৩টি। পৌর কর্তৃপক্ষ হয়তো মনে করেন যে এই শহরে মানুষ বাস করে না, বাস করেন ফেরেশতারা। আবার পদ্মা সেতু হয়েছে ঠিকই, তাতে মানুষের যে বিস্তর সুবিধা তাও জানা কথা, কিন্তু রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার তো কোনো প্রকার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেনি, ফলে ঢাকার লোক যে ওই সেতুপথে মফস্বলে গিয়ে বসবাস শুরু করবে এমন ভরসা বৃথা, মফস্বলের লোকেরাই বরং ঢাকায় আরও অধিক সংখ্যায় আসবে, এমনই শঙ্কা। আর এমনও শুনব আমরা যে গ্রামে সোয়া চার কোটি টাকা খরচ করে যে সেতু তৈরি করা হয়েছে তাতে উঠতে বাঁশের সাঁকো লাগে, যেমনটা দেখা গেছে ঢাকার কাছেই, ধামরাইতে। শুনতে হবে যে, ঢাকার শুক্রাবাদ এলাকাতে একজন বিউটিশিয়ানকে হোম সার্ভিসে বোনের নাম করে সাভার থেকে ডেকে এনে তিনজন যুবক মিলে ধর্ষণ করেছে, জানব ওই যুবকরা একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বেকার যুবকরা অবশ্যই আরও অধিক সংখ্যায় মাদকাসক্ত হবে। হতাশার লালনভূমি থেকে জঙ্গি তৎপরতা যে বৃদ্ধি পাবে না এমনটা আশা করা নিতান্ত অসংগত; এবং সড়কে মৃত্যুমিছিল আরও দীর্ঘ হয়ে উঠবে। উন্নতির আঘাতে মানবিক সম্পর্কগুলো সব ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। বড় হয়ে উঠছে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। পারিবারিক দ্বন্দ্ব রূপ নিচ্ছে গৃহযুদ্ধের। রাজনৈতিক গৃহযুদ্ধের কথা আমরা অনেক সময়েই শুনে থাকি। যেমন একাত্তরের যুদ্ধকে বাইরের জগতের অনেক মহল থেকে চিহ্নিত করা হয়েছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ বলে—বলা হচ্ছিল যে গৃহযুদ্ধ বেধেছে শাসিত পূর্ববঙ্গের সঙ্গে শাসনকারী পশ্চিম পাকিস্তানের। গৃহযুদ্ধ নয়, ওটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ। মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধ আগামী দিনেও সব গৃহযুদ্ধকে পরিণত করা দরকার হবে ওই মুক্তিযুদ্ধে। কোনো এক দেশে নয়, সব দেশে, সারা পৃথিবীব্যাপী। যুদ্ধটা হবে পুঁজির বিরুদ্ধে শ্রমের; শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের। এই যুদ্ধে পুঁজির ও শোষকদের পরাজয়ের ওপরই নির্ভর করছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। শত্রুপক্ষের পরাজয় যদি ঘটে তবেই মানুষ তার স্বাভাবিকতা ফেরত পাবে; মানবিক সম্পর্কগুলো জোরদার হয়ে উঠবে। তার আগে নয়। ওই যুদ্ধটা কিন্তু চলছে। কাফকা যখন তার গল্প ও উপন্যাসগুলো লিখছিলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধটা তখন প্রবল হয়ে উঠছিল। যার একটি পরিণতি দেখা গেছে ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবে। তারপর কেবল রুশ দেশে নয়, অন্য দেশেও; এবং চীনে সামাজিক বিপ্লব ঘটেছে। কাফকা যে বিপ্লবী সংগ্রামের খবর জানতেন না তা নয়। বিপ্লবীরা তার আশপাশেই ছিলেন। যে চারজন মহিলার সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল তাদের দুজনই তো ছিলেন কমিউনিস্টদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল; কিন্তু কাফকা নিজে ওই আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হননি। আর সে জন্যই তো দেখা যায় যে, তার রচনাতে বাস্তবতার যে ভয়াবহতা সেটির মর্মস্পর্শী উন্মোচন রয়েছে, কিন্তু তা থেকে মুক্তির পথের দিশাটা নেই। তবে বাস্তবতার উন্মোচনও সমাজপরিবর্তনের পক্ষে কাজ করে বৈকি। খুব ভালোভাবেই কাজ করে। আমরা কি ফরাসি বিপ্লবের কথা ভাবতে পারি সে সময়ে লেখকদের রচনার কথা বাদ দিয়ে? রুশ বিপ্লব কি সম্ভব হতো যদি টলস্টয়, দস্তয়ভস্কি এবং লেনিন, এমনকি ট্রটস্কি যদি না লিখতেন? কাফকার লেখাও সমাজ বিপ্লবকে সাহায্য করেছে বৈকি। আর বর্তমান বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন যে তেমন অগ্রসর হচ্ছে না তার একটা কারণও কিন্তু সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে দুর্বলতা। বলা হচ্ছে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির দরুন বই এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে; লোকে এখন আর পড়তে চায় না, দেখেই সন্তুষ্ট হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন কিন্তু নতুন কোনো ঘটনা নয়; যুগের পর যুগ ধরে অব্যাহতভাবে তা ঘটে চলেছে। কিন্তু কই, অতীতে তাদের উন্নয়ন তো গ্রন্থপাঠকে নিরুৎসাহিত করেনি। কাগজ ছিল না, কাগজ এলো; ছাপাখানা এসে বইয়ের প্রচারে বিপ্লব ঘটিয়ে দিল; রেডিও, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন কেউই পারেনি বইয়ের মূল্য ও মর্যাদা হ্রাস করতে; তবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের আজ কেন এ সাফল্য? বলাই বাহুল্য, সাফল্যের কারণ বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি নয়; কারণ হচ্ছে মালিকানা। মালিকরা চায় না সাহিত্যের চর্চা বৃদ্ধি পাক। কারণ তারা জানে যে, সাহিত্য তাদের একচেটিয়া কর্তৃত্বের শত্রুপক্ষ। তারা জানে যে, সাহিত্যের সৃষ্টি ও পঠন মানুষকে সজীব ও সতর্ক করবে, হৃদয়কে দেবে প্রসারিত করে, বুদ্ধিকে করবে শানিত এবং মানুষ তখন পুঁজিবাদের তৎপরতাকে চিনে ফেলবে, তার দুঃশাসনকে ছিন্ন করতে সংঘবদ্ধ হবে। সে জন্যই প্রযুক্তির উন্নয়নকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাহিত্যকে দমন করার কাজে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর হিটলার যে বইয়ের বহ্ন্যুৎসব ঘটিয়েছিল এবং বাংলাদেশে জঙ্গি বলে কথিতরা যে লেখক ও প্রকাশকদের প্রাণহানি ঘটাতে চায় সে-কাজ তাদের পক্ষে স্বাভাবিক বটে। পুরোপুরি চরিত্রসম্মত। পৃথিবীটা বড় হচ্ছে, কিন্তু খাটো হয়ে যাচ্ছে মানুষ। মানুষের চোখ খুদে বার্তায়, খুদে মুঠোফোনে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। নাকি এমন অগ্রগতি ঘটবে যাতে বর্তমান যুগকে মনে হবে গরুর গাড়ির যুগ। ভালো কথা; আমরাও অগ্রগতি চাই, অবশ্যই চাই। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সেই যুগে মানুষের হৃদয় ও বুদ্ধির স্থানটা কোথায় হবে সে প্রশ্নটা খুবই জরুরি। হৃদয় ও বুদ্ধির চর্চা না থাকলে মানুষ তো মানুষই থাকবে না, পরিণত হবে কৃত্রিম যন্ত্রে। বলা হচ্ছে ওই বিপ্লবের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অবশ্যই। কিন্তু কী নিয়ে দাঁড়াব আমরা? কোন অস্ত্রের ওপর ভরসা হবে আমাদের? হ্যাঁ, বিশেষভাবে দাঁড়াতে হবে কিন্তু সাহিত্য নিয়েই। সাহিত্যের ভেতর যে মানবিকতা থাকে, থাকে ইতিহাস ও দর্শন, থাকে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগের ক্ষেত্র ও আগ্রহ, দাঁড়াতে হবে তাদের নিয়েই। বাংলা ভাষায় ‘সাহিত্য’ শব্দটি দ্যোতনা বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ। সাহিত্য এসেছে সহিত থেকে, সহিতে আছে সংযোগ, রয়েছে সহমর্মিতা, থাকে সহযাত্রার ডাক। সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ওই সংযুক্তিতেই। ইংরেজিতে সাহিত্যকে বলে লিটারেচার, লিটারেচার এসেছে লেটার থেকে, লেটার হচ্ছে বর্ণমালার অক্ষর। সাহিত্য অবশ্যই অক্ষরে লেখা হয়, সেই অক্ষরে ধ্বনি থাকে, থাকে মানুষের আশা ও মর্মবেদনা; আর থাকে যুক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা, বাংলা শব্দ ‘সাহিত্যে’ যা আমরা পেয়ে যাই পেয়ে থাকি। সাহিত্য ছাড়া তাই আমাদের গতি নেই। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহিত্য অস্ত্র বটে, খুবই কার্যকর একটি অস্ত্র। ভালো কথা, খুদে বার্তা ও মুঠোফোনের প্রবলতায় আমরা কিন্তু চিঠি লিখতে ভুলে যাচ্ছি; সেই চিঠি যাতে মনের কথা অকাতরে বলা যায়, যা বারবার পড়া যায়, পড়ার পরও রেখে দেওয়া যায় সঞ্চয় হিসেবে। চিঠি লেখাও সাহিত্যচর্চাই, প্রকারান্তে। আরও অনেক বিশ্ব দিবসের পাশাপাশি বিশ্ব ডাক দিবসও উদযাপিত হয়, প্রতিবছর। সেই উপলক্ষে বিশ্বজনীন ডাক (পোস্টাল) উন্নয়নের সূচকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ে থাকে। এ বছরের প্রতিবেদন ডাক-সেবায় বাংলাদেশের স্থান যে সর্বনিম্নে, সঙ্গী তার আফগানিস্তান, সেটা কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার কি? চিঠি লেখার অভ্যাস আমাদের আগেও কম ছিল, এখন ভয়ংকর রূপে নিম্নবর্তী হয়ে পড়েছে। পুঁজিবাদবিরোধী সংগ্রামটা যে থেমে গেছে তা নয়। ছাড় দিয়ে, ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে, প্রচার-প্রপাগান্ডার মধ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, সর্বোপরি সংগ্রামের খবর প্রকাশিত হতে না দিয়ে এবং সংগ্রামীদের সম্ভব-অসম্ভব সব পন্থায় নির্যাতন করে, ধারণা তৈরি করা হচ্ছে যে আন্দোলন শেষ, এখন পুঁজিবাদ ছাড়া অন্য কিছু নেই, সেটাই টিকে থাকবে। তাই চলতে হবে কায়দা করে, তার সঙ্গে সমঝোতার মধ্য দিয়ে। বলা হচ্ছে না যে পুঁজিবাদ টিকে থাকলে এই বিশ্ব আর মনুষ্য বসবাসের উপযোগীই থাকবে না। তবে মানুষ যেহেতু মানুষ হিসেবেই বেঁচে থাকতে চায় তাই সংগ্রামটা চলছেই। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে যেখানে যত সংগ্রাম হয় ও হচ্ছে, তার কোনোটাই পুঁজিবাদের পক্ষে নয়, বিরুদ্ধেই। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে ধরা, ইরানে ধর্মের নামে স্বৈরশাসনে নিহতদের বিরুদ্ধে মেয়েদের বিক্ষোভ, আফগানিস্তানে মেয়েদের তালেবানবিরোধী শোভাযাত্রা—এসব ঘটনা তাৎপর্যহীন নয়। এক বছরের মধ্যে চিলি, কলম্বিয়া ও ব্রাজিলের নির্বাচনে বামপন্থিদের বিজয় লক্ষ করার মতো। আমেরিকার অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনে ট্রাম্প-অনুসারীরা যে শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারল না তাতেও তো বোঝা যায় কট্টরপন্থার ভবিষ্যৎ সংকুচিত হয়ে আসছে। আর উদারনীতিকরা যে মাঠ ছেড়ে দিয়ে রক্ষণশীলদের কাতারে শামিল হচ্ছেন, সে ঘটনা থেকেও বেরিয়ে আসছে এই খবর যে, এখন হয় সমাজবিপ্লবী হতে হবে নয়তো প্রতিবিপ্লবী, মাঝখানে ঠাঁই খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু সমাজ বিপ্লবের জন্য সংস্কৃতির চর্চা চাই, সংস্কৃতিচর্চা কখনোই আদর্শ-নিরপেক্ষ হয় না, হওয়ার উপায় নেই; বিপ্লবীদের সংস্কৃতিচর্চাও হতে হবে পরিচ্ছন্ন রূপে সমাজ বিপ্লবের আদর্শে অঙ্গীকারবদ্ধ। এবং তাতে সাহিত্যের ভূমিকা থাকবে অন্য কোথাও নয়, একেবারে শীর্ষেই। লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডেমরার ডিএনডি খালে পড়ে থাকে কুকুর-বিড়ালের মৃতদেহ

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আপত্তি নেই যুক্তরাজ্যের

সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারে ইন্টারনেটের ধীরগতি

আলভারেজের দাম বেঁধে দিল ম্যানসিটি

জোট বেঁধে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় রাশিয়া-চীনের যুদ্ধবিমানের হানা

প্রাথমিক বিদ্যালয় কবে খুলবে, সিদ্ধান্ত রোববার

পাঁচ পদে ২০ জনকে নিয়োগ দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়

মোবাইল ইন্টারনেট কবে চালু হবে, জানা যাবে কাল

শিশু আহাদের দাফন দিয়ে বাড়িতে শুরু পারিবারিক কবরস্থানের

প্যারিসে বেরসিক বৃষ্টিতে ভিজল বিশ্ব নেতারা

১০

শেখ হাসিনার অর্জন ধ্বংস করতে চায় হামলাকারীরা : ওবায়দুল কাদের

১১

ইরানের সঙ্গে সমঝোতা করতে চেয়েছিলেন বাইডেন

১২

ইহুদিদের পছন্দ করেন না কমলা, বললেন ট্রাম্প

১৩

ন্যাটোর আদলে সামরিক জোট গঠনের প্রস্তাব ইসরায়েলের

১৪

যানজট সরিয়ে ভোগান্তি দূর করেন নবরু

১৫

বর্ষায় জমে উঠেছে চাক জালের হাট

১৬

ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

১৭

সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা

১৮

ঝালকাঠিতে গভীর নলকূপে পানির সংকট

১৯

ব্যাট-বলে সাকিবকে শরীফুলের টেক্কা

২০
X