চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের ঘটনার পেছনে কারখানায় কমপ্লায়েন্সের ঘাটতি ও অবহেলা ছিল বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে ৯টি সুপারিশ উল্লেখ করেছে তদন্ত কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এর আগে গতকাল সোমবার রাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটির প্রধান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) রাকিব হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে রাকিব হাসান বলেন, ‘অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের এ ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম। গত একদশকে সারা পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনার নজির চার-পাঁচটার বেশি নেই। এই ধরনের বিস্ফোরণ খুবই কম হয়ে থাকে। আমরা তদন্ত কার্যক্রমে পুরো বিষয়টা তুলে আনার চেষ্টা করছি। আমরা ৯ দফা সুপারিশ করেছি। আশা করছি, এই ৯ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে। এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে এবং এটি রোধে কী কী কাজ করা যেতে পারে, তার সুপারিশমালা আমরা দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে যেন এ ধরনের কার্যক্রম না ঘটে, তার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। চট্টগ্রামে যতগুলো অক্সিজেন প্লান্ট আছে, তাদের
নিয়ে আগামী সপ্তাহে একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হবে। সেখানে অক্সিজেন প্লান্টের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’ এ সময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, তদন্ত কমিটি দ্রুততার সঙ্গে প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে। তারা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। দুর্ঘটনার কারণ, উৎসস্থল ও সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে প্রতিবেদনটি পাঠানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা এলে বিস্তারিত জানানো হবে।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ যেসব কারখানা আছে, তা পরিদর্শন দু-এক দিনের মধ্যে আবার শুরু করা হবে। কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে এই পরিদর্শন চলবে। সব ধরনের মাঝারি ভারী শিল্পকারখানায় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে অভিযান পরিচালনা, সচেতনতা কর্মসূচিসহ মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৪ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীমা অক্সিজেন লিমিটেড নামের প্লান্টে হঠাৎ বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হন। আহত হন ৩০ জন। বিস্ফোরণে প্লান্টের আশপাশের এক বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। ঘটনার দিনই ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। ঘটনার পরদিন ৫ মার্চ সীমা অক্সিজেন কারখানা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানসহ কমিটির সদস্যরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেছিলেন, এখানে অক্সিজেনের পাশাপাশি আমরা কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার থাকতেও দেখেছি। এগুলোর অনুমোদন তাদের ছিল না। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সীমা অক্সিজেন কারখানা ২০০৭ সালে লাইসেন্স পায়। উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৫ হাজার ঘনমিটার। ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে ছাড়পত্রের আবেদন করেনি সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ভয়াবহ বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মামুন উদ্দিনসহ ১৬ জনকে আসামি করে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা হয়েছে।