ড. মো. নাছিম আখতার
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র জনগণই রুখবে

রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র জনগণই রুখবে
জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দেশের রাজনীতির মাঠ সরগরম হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপি দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করেছে। ঢাকার সমাবেশে ১০ দফা ঘোষণা করে তাদের সমাবেশ শেষ হয়। এরপর তারা ঘোষণা করে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা। তাদের সাম্প্রতিককালের কর্মসূচি হচ্ছে পদযাত্রা। এর বাইরে তাদের সমমনা দলগুলো যেসব আয়োজন করছে, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, বিএনপি ও তাদের সমমনাদের লক্ষ্য একটি অরাজনৈতিক সরকার গঠন। এমনটি হলে আবারও জনগণ রাজনৈতিক শূন্যতার অন্ধকারে নিপতিত হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। জনগণ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসন দেখেছে। ২০০৭ ও ’০৮ সালের অপশাসন পেরিয়ে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। কভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ঠিক এ সময়ে সংবিধানে বর্ণিত নিয়মে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা গণতন্ত্র গেল গেল বলে চিৎকার করে গলা ফাটাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশে তথ্যটি তুলে ধরলাম—ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বিচারে ২০২২ সালে বিশ্বে গণতন্ত্রের দশায় খুব বেশি পরিবর্তন না এলেও বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়েছে দুই ধাপ। পাঁচটি মানদণ্ডে একটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে ইআইইউ সম্প্রতি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ২০২২ সালে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে ৭৩ নম্বরে। ২০২১ সালে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৭টি দেশের মধ্যে ৭৫তম। এমন ইতিবাচক সূচকের পরও কয়েক দিন আগে ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘রিপাবলিক মানেই সবাইকে নির্বাচিত হতে হবে, তা নয়। গণতন্ত্রকে রক্ষা করার লক্ষ্যে অল্পসময়ের জন্য অনির্বাচিত সরকার থাকলে তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না।’ যারা অনির্বাচিত সরকারের ব্যাপারে আগ্রহী, তাদের উদ্দেশ্য কী? অনির্বাচিত সরকার নিয়ে দেশের মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০৭ ও ’০৮ সালের অভিজ্ঞতা বলছে, এমন সরকার এলে ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন ধ্বংস হয়। ব্যাহত হয় উৎপাদন। সংবিধান সমুন্নত না থাকলে মানুষের মৌলিক অধিকার থাকে না। রুদ্ধ হয় বাকস্বাধীনতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে যখন কোনো সাধারণ নির্বাচন আসে বা দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়, তখন বিদেশি কূটনীতিকদের নানা তৎপরতা চোখে পড়ে। একটু পেছন ফিরে তাকালেই আমরা দেখতে পাই, নব্বইয়ের দশক থেকে নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা আলাপ-আলোচনা করেছেন। আবার দেশের অনেক রাজনৈতিক দলকেও দেখা গেছে নানান বিষয় নিয়ে বিদেশিদের কাছে যেতে। দেশের সুস্থ রাজনীতির জন্য বিষয়টি মঙ্গলজনক না হলেও, ঘটনা থেমে থাকছে না। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগে ঢাকায় এসেছিলেন তৎকালীন কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেন। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত হয়ে ঢাকায় আসেন অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো। ২০০৬ সালের শেষদিকে এবং ২০০৭ সালের প্রথম দিকে ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা দেশের কিছু কূটনীতিক ছিলেন বেশ তৎপর। উইকিলিকসে প্রকাশিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিসের গোপন তারবার্তা প্রকাশ পায়। ওই তথ্য থেকে জানা যায়, ঢাকায় পশ্চিমা কূটনীতিকরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য নিজেদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক করতেন। যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কফি গ্রুপ’। এই গ্রুপে ছিলেন আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগেও বিদেশি কূটনীতিকদের নানা তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। ৭ মার্চ ২০২৩, আর একটি উদ্বেগের দিন। চল্লিশ বিশ্বনেতার বিজ্ঞাপন-বিবৃতি জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের চল্লিশজন বিশ্বে নেতা। চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়েছে এ চিঠি। যাতে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একজন শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে তার অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাতীয় সংসদের আগামী নির্বাচনের এক বছরের কম সময় বাকি থাকতে হঠাৎ করে চল্লিশজন বিদেশি নাগরিকের এমন অনুরোধের নেপথ্যে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। এর আগেও দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সুপরিকল্পিতভাবে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পদ্মা সেতু প্রকল্পে কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিদেশি ঋণ বাতিলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে। কিন্তু তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই বলেই মনে হচ্ছে। চল্লিশ বিশ্বনেতা নিজেরাই এক-একটি প্রতিষ্ঠান। তারা চাইলে সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করতে পারতেন। সরাসরি চিঠিও লিখতে পারতেন। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চিঠি প্রকাশ! বিশ্বাস হতে চায় না। আমরা কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে গিয়ে নালিশ করি। দেশের দুর্নাম করে আমাদের মনে হয় অনেক বড় কাজ করা হয়েছে; কিন্তু সবার মনে রাখা দরকার, এই দেশের ভাগ্য এ দেশের মানুষই গড়বে। বাংলাদেশের জনগণ বারবার দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করেছে। আমরা দেখেছি পদ্মা সেতুর দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছিল, তা স্তব্ধ হয়ে যায় ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন কানাডার অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের বিচারক আয়ান নর্ডেইমারের রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রমুক্ত হয়। ষড়যন্ত্র যত গভীরই হোক না কেন, তা মোকাবিলার সামর্থ্য রয়েছে জনগণের। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টির চেষ্টা ততই প্রকট হবে। কিন্তু গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারে বিশ্বাসী কোনো দলই সংবিধানের বাইরে অনির্বাচিত সরকারের চিন্তা করতে পারে না। তাই আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ বেছে নেবে আগামী দিনের সরকার। লেখক : উপাচার্য, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আপত্তি নেই যুক্তরাজ্যের

সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারে ইন্টারনেটের ধীরগতি

আলভারেজের দাম বেঁধে দিল ম্যানসিটি

জোট বেঁধে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় রাশিয়া-চীনের যুদ্ধবিমানের হানা

প্রাথমিক বিদ্যালয় কবে খুলবে সিদ্ধান্ত রোববার

পাঁচ পদে ২০ জনকে নিয়োগ দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়

মোবাইল ইন্টারনেট কবে চালু হবে, জানা যাবে কাল

শিশু আহাদের দাফন দিয়ে বাড়িতে শুরু পারিবারিক কবরস্থানের

প্যারিসে বেরসিক বৃষ্টিতে ভিজল বিশ্ব নেতারা

শেখ হাসিনার অর্জন ধ্বংস করতে চায় হামলাকারীরা : ওবায়দুল কাদের

১০

ইরানের সঙ্গে সমঝোতা করতে চেয়েছিলেন বাইডেন

১১

ইহুদিদের পছন্দ করেন না কমলা, বললেন ট্রাম্প

১২

ন্যাটোর আদলে সামরিক জোট গঠনের প্রস্তাব ইসরায়েলের

১৩

যানজট সরিয়ে ভোগান্তি দূর করেন নবরু

১৪

বর্ষায় জমে উঠেছে চাক জালের হাট

১৫

ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

১৬

সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা

১৭

ঝালকাঠিতে গভীর নলকূপে পানির সংকট

১৮

ব্যাট-বলে সাকিবকে শরীফুলের টেক্কা

১৯

দেশকে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতি বানাতেই এমন সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী

২০
X