কালবেলা প্রতিবেদক
১০ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকায় আতঙ্কের নাম পয়ঃবর্জ্য

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে হতভম্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘটনার কূলকিনারা করতে পারছে না ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। বিভিন্ন সময়ে ছোট ছোট বিস্ফোরণের ঘটনা আমলে নিয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত মিললেও সিদ্দিকবাজার এবং সায়েন্সল্যাবের ঘটনা নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ, এ দুটি বিস্ফোরণের ধরন ভিন্ন এবং হতাহতের পরিমাণ অনেক বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ঘটনা আরও ঘটবে। গ্যাস, স্যুয়ারেজ এমনকি ওয়াসার পানির লাইন থেকে গ্যাস জমে এমন আরও বিস্ফোরণ হতে পারে।

ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৫০ বছরেও রাজধানীতে কোনো কার্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। স্বাধীনতার কিছুকাল আগে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পয়ঃনিষ্কাশন লাইন তৈরি করা হয়। পরে রাজধানীর আরও কিছু স্থানে লাইন তৈরি হলেও সংস্কার করা হয়নি। বিশেষ করে পুরান ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় লাইন নির্মাণের পরে আর কখনো সংস্কার হয়নি। ফলে এসব পুরোনো লাইন দীর্ঘদিন ধরেই অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। কোথাও কোথাও পয়ঃবর্জ্য জমাট বেঁধে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। রাজধানীর হাজারীবাগ, লালবাগসহ পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকা, ধানমন্ডি, মগবাজার (আংশিক), লালমাটিয়া (আংশিক), বাসাবো, গেণ্ডারিয়া ও গুলশান-বনানী (আংশিক) এলাকায় পয়ঃনালা রয়েছে। আর কোথাও পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ২০২১ সালে একটি গবেষণাপত্রে এ বিষয়ে সুবিস্তৃত তথ্য দেন। এতে উল্লেখ করা হয়, রাজধানীর ২ ভাগের কম পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার আওতাধীন জনসংখ্যা এক কোটি হিসাবে রাজধানীতে দৈনিক ৯১০ মিলিয়ন লিটার পয়ঃবর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ৯০০ মিলিয়ন লিটার অপরিশোধিত থেকে যায়।

ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, অপরিশোধিত বর্জ্য ড্রেনে আটকে থাকে বা বিভিন্ন মাধ্যমে অপরিশোধিতভাবে খাল-বিল, জলাশয় ও নদীতে গিয়ে পড়ে। যেসব ড্রেনে বর্জ্য আটকা পড়ে, সেসব স্থানে বিষাক্ত গ্যাস জন্মে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্যুয়ারেজের অধিকাংশ লাইন পাইপের হওয়ায় অনেক সময় তাতে বর্জ্য জমতে জমতে পাইপের মুখ বন্ধ হয়ে ভেতরে গ্যাসের চাপ তৈরি হয়। পরে বিস্ফোরণ ঘটে।

ওয়াসা সূত্র বলছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটারের (খোলা ও পাইপ) মতো স্যুয়ারেজ লাইন রয়েছে। তবে এসব লাইনের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান বা নকশা কোনো সংস্থার হাতেই নেই। তা ছাড়া নগরীর কোন কোন স্থান দিয়ে স্যুয়ারেজ লাইন গেছে, তারও সঠিক কোনো তথ্য নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। ফলে মাঝেমধ্যে লাইনগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অবস্থান চিহ্নিত করতে না পারায় সংস্কার বা পরিষ্কার কিছুই করা যায় না।

যদিও অকেজো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণে একটি নতুন প্রকল্প নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পে পাগলা পয়ঃশোধনাগার পুনর্নির্মাণ এবং ৪৬২ কিলোমিটার পয়ঃনিষ্কাশন লাইন নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করা হবে। ৩ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পে ২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের অগ্রগতি নেই।

জমে থাকা গ্যাসে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতে পারে কিনা—জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান কালবেলাকে বলেন, বদ্ধ ঘরে বা কক্ষে গ্যাস জমতে পারে। জমে থাকা এই মিথেন গ্যাসের সঙ্গে অক্সিজেনের উপস্থিতি থাকলে দহনের কারণে বিস্ফোরণ হওয়া স্বাভাবিক।

গ্যাসের প্রেশারটা কতটুকু ছিল, সে অনুযায়ী বিস্ফোরণের মাত্রা নির্ভর করে জানিয়ে রসায়নের এ অধ্যাপক বলেন, ‘গুলিস্তান ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় যে বিস্ফোরণ হলো—জমে থাকা গ্যাসে এত ভয়াবহতা কীভাবে ছড়াল, তা বোধগম্য নয়। এটা সন্দেহজনক। বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার।’

বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ ও র্যাবের বোমা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল বিভাগের প্রধান এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, যে কোনো উপায়েই হোক ভবনের আবদ্ধ কক্ষে গ্যাস জমেছিল। সেখানে শর্টসার্কিট বা অন্য কোনো উপায়ে স্পার্ক থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক আলি আহমদ খান বলেন, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে ও মগবাজারের একটি ভবনে একইভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। বাতাসে ৫-১৭% গ্যাস থাকলেই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। আর এর তীব্রতা নির্ভর করে যেখানে বিস্ফোরণ হয় সেই জায়গাটি কতটা বদ্ধ, তার ওপর। সিদ্দিকবাজারের ঘটনায় ভবনের বেজমেন্টে বিস্ফোরণের তীব্রতা বাড়িয়েছে। খোলা থাকলে গ্যাস জমতে পারত না। বেরিয়ে যেত।

এসব বিষয়ে জানতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা সম্প্রতি কালবেলাকে বলেন, ঢাকা শহরের ২০ শতাংশ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে। বাকি ৮০ শতাংশ এলাকায় নেই। যদিও ২০৩০ সালের মধ্যে পুরো ঢাকাকে পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে; কিন্তু আদৌ তা সম্ভব নয়। পুরো ঢাকাকে সুবিধার আওতায় আনতে আরও সময় দরকার। বড় বাজেট দরকার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাতক্ষীরায় নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠে নেমেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

‘তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা জণগণের গলাকাটার সুযোগ পায়’

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন অভিযোগের জবাব দিলেন শিবলী সাদিক

ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার মতো অর্থ নেই যুক্তরাষ্ট্রের

এবারও সেরা করদাতা জর্দা ব্যবসায়ী কাউছ মিয়া

আবারও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ

গানের স্বত্ব নিয়ে শাফিন-হামিনের দ্বন্দ্ব

শাহজাহান ওমরের বাড়ির বিএনপি কার্যালয় এখন আ.লীগের নির্বাচনী অফিস

সেমিফাইনালে কিংস-মোহামেডান

এমপি নির্বাচিত হলেও পিএসএলে খেলবেন সাকিব

১০

জোট ও জাপার সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে যে বার্তা দিলেন আমু

১১

ফেনীতে নৌকার প্রার্থী আলাউদ্দিন নাসিমকে শোকজ

১২

শাকিব শিক্ষিত নন, আমি অনেক শিক্ষিত : জায়েদ খান

১৩

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২৩ ফেব্রুয়ারি

১৪

আন্দোলনকে আরও বেগবান করার আহ্বান রবের

১৫

সরকারি কর্মকর্তাকে পেটানোর ঘটনা ৫০ হাজারে দফারফা

১৬

‘ভাড়া করা লোক দিয়ে গাড়িতে আগুন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না’

১৭

তৈমূরের আয় বেড়েছে দেড় গুণ, স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৬৬ গুণ

১৮

আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল বললেন, মুজিবুল হক চুন্নু জামানত হারাবেন

১৯

উপকূল অতিক্রম করেছে ‘মিগজাউম’, বাড়ল সতর্ক সংকেত

২০
X