সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
১৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুলিশের ৪০ ‘ক্যাশিয়ার’

চট্টগ্রাম মহানগরী চষে বেড়াচ্ছেন একঝাঁক ‘পুলিশের ক্যাশিয়ার’। তারা পুলিশ ও ডিবির নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন খাত থেকে মাসোহারা আদায় করছেন। তাদের অবাধ বিচরণ মাদক ব্যবসা, জুয়ার আখড়া, ফুটপাতের দোকান, পরিবহন স্ট্যান্ড, আবাসিক হোটেল ও ভেজাল খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে। ক্যাশিয়ার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে নানা হুমকির মধ্যে রাখছেন তারা। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে জনসাধারণের কাছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মাসিক সভায়ও আলোচনায় এসেছে স্বঘোষিত পুলিশ ক্যাশিয়ারদের কর্মকাণ্ড।

সিএমপি, নির্ভরযোগ্য সূত্র ও নানা তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, সিএমপির চারটি জোনে ১৬টি থানায় ১৬ জনই মূল ‘ক্যাশিয়ার’ রয়েছেন। প্রত্যেক ক্যাশিয়ারের অধীনে আবার দুই-তিনজন করে লোক। তারা পুলিশের সোর্স কিংবা দাগি অপরাধী। এভাবে ১৬টি থানায় ৪০ জনের ওপরে কথিত ‘ক্যাশিয়ার’ রয়েছেন। পুলিশ ও ডিবির নাম ভাঙিয়ে বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন খাত থেকে মাসোহারা নেন তারা। কথিত এসব ক্যাশিয়ারের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, মাদক কারবারি থেকে পেশাদার অপরাধীও।

সরেজমিন জানা যায়, নগরীর কোতোয়ালি থানার রিয়াজউদ্দিন বাজার ও স্টেশন রোডকেন্দ্রিক মাসে অন্তত অর্ধকোটি টাকা মাসোহারা আদায় করা হয় পুলিশের নামে। স্বর্ণ চোরাকারবারি, হুন্ডি ব্যবসা, চোরাই মোবাইল কেনাবেচা, মাদক কারবারি, জুয়ার আখড়া ও হকারকেন্দ্রিক ব্যবসায় সক্রিয় কথিত ক্যাশিয়াররা। সিআরবি রেলওয়ে বস্তি ঘিরে গড়ে উঠেছে নগরীর সর্ববৃহৎ মাদকের আখড়া। সেখান থেকে সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজাদ হোসেন ও শাহাদাতের পকেটে যায় মোটা অঙ্কের মাসোহারা। প্রতিদিন ডিবি পুলিশের নামেও টাকা আদায় করেন কথিত সোর্স নাছির উদ্দীন ওরফে ল্যাডা নাছির। পেশাদার এ অপরাধী কোতোয়ালি ও চকবাজার থানা পুলিশের নামেও নানা অপকর্মে লিপ্ত দীর্ঘদিন। এ এলাকায় দালাল সুমন, আলী, জাহাঙ্গীর, রাশেদসহ অনেকে জড়িত এসব অপকর্মে। পাঁচলাইশ থানা এলাকার সব অপরাধের নেপথ্যে ঘুরেফিরে উঠে আসছে কুদ্দুসের নাম। কুদ্দুস পুলিশের চাকরিচ্যুত কনস্টেবল। ষোলশহর রেলস্টেশনে গড়ে ওঠা রমযান-বশরের বিশাল মাদক ও জুয়ার আখড়া থেকে পুলিশের নামে দিনে অন্তত ২০ হাজার টাকা মাসোহারা নেন তিনি। ডবলমুরিং ও আকবর শাহ থানার ক্যাশিয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন সক্রিয় রয়েছেন অলি উদ্দিন। শূন্য থেকে অর্থবিত্তের মালিক বনে যাওয়া দুই ক্যাশিয়ার কুদ্দুস ও অলিউদ্দিন।

একইভাবে চকবাজার কাঁচাবাজার, ধনিরপুল থেকে খালপাড়, অলি খাঁ মসজিদ থেকে প্যারেড কর্নার পর্যন্ত ভাসমান দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয় পুলিশের নামে। অন্তত ৩০০ হকার থেকে এ টাকা তোলেন বিপ্লব। জিইসি মোড় থেকে মেহেদীবাগ পর্যন্ত শতাধিক হকার নিয়ন্ত্রণ করছেন ইয়াছিন। দিদার মার্কেট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দায়িত্বে দেলোয়ার। তবে তারা কেউ পুলিশে কর্মরত নন। দিনভর তোলা টাকা রাত হলে বুঝিয়ে দেওয়া হয় চকবাজার থানার স্বঘোষিত ক্যাশিয়ার কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলামের হাতে। থানা ফটকের পাশে ভাসমান দোকান বসিয়ে প্রতিদিন ভাড়ার নামে চাঁদা তোলেন তৌহিদুল নিজেও। দফায় দফায় বদলি আদেশ উপেক্ষা করে টানা সাত বছর চকবাজার থানায় কর্মরত তিনি। শুধু চকবাজার নয়, নগরজুড়ে চলছে পুলিশের নামে কথিত ক্যাশিয়ারদের অবৈধ বাণিজ্য। চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট মোড় থেকে কালুরঘাট ব্রিজ এলাকায় মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে চাঁদাবাজি চলছে পুলিশের নামে। কাপ্তাই অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও ভাসমান দোকান থেকে চাঁদা আদায় করেন পেশাদার অপরাধী আজাদ ও বেলাল।

আজাদের নিয়ন্ত্রিত মাদকের স্পটও চলছে নির্বিঘ্নে। বহদ্দারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিউদ্দিন ভূঁইয়া ও টিআই উত্তম কুমারের নামে দিনদুপুরে পরিবহন স্ট্যান্ড, কাঁচাবাজার ও ভাসমান দোকান এবং আইয়ুবের মাদক ব্যবসা থেকে মাসোহারা নেন সোলায়মান ও বাবুল। পূর্ব ষোলশহর এলাকায় সক্রিয় সোর্স সাদ্দাম।

নগরজুড়ে সক্রিয় আলোচিত ক্যাশিয়ারদের মধ্যে রয়েছেন কোতোয়ালিতে নুরু মিয়া, চান্দগাঁও থানায় এএসআই হামিদ ও এএসআই ইসমাইল। বন্দর থানার এএসআই বাবুল চন্দ্র দাশ, সদরঘাট থানার জাহাঙ্গীর মাঝি ও মিলন, খুলশী থানার মো. আজাদ ওরফে ডাইল আজাদ, ইপিজেড থানার সুলতান, পাহাড়তলি থানার মঞ্জু, হালিশহর থানার শাহাবুদ্দিন, কর্ণফুলী থানার শফি, বাকলিয়া থানার শিমুল, ডিবি পুলিশের সোর্স বহদ্দারহাটের বাবুল অন্যতম। এসব এলাকায় কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন, সেগুলো মূল ক্যাশিয়াররা ঠিক করে দেন। এ টাকার বেশিরভাগই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথা সিএমপির কিছু ঊর্ধ্বতন বিশেষ কর্মকর্তার পকেটে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

কয়েকজন পুলিশ সদস্য বলেন, সিএমপি হেডকোয়ার্টারে মাসিক অপরাধ সভায় এসব ক্যাশিয়ারের ব্যাপারে আলোচনায় আসে। এ সময় থানার ওসিরা ক্যাশিয়ারের ব্যাপারটি এড়িয়ে যান। তারা দাবি করেন, থানায় চা আনার লোক, ইলেকট্রিশিয়ান ও ঝাড়ুদার হিসেবে কিছু লোক রাখা হয়েছে।

পাঁচলাইশ থানার কথিত ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত চাকরিচ্যুত কনস্টেবল কুদ্দুস কালবেলাকে বলেন, এসব যড়যন্ত্র। একজন আরেকজনের পেছনে লেগেছে বিনাকারণে। এগুলোর কারণে মান-সম্মানের বিষয় হয়ে উঠেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১২ দিন স্মৃতিসৌধে যেতে মানা

ফেলিক্সের গোলে অ্যাথলেটিকোকে হারাল বার্সেলোনা

শেখ মনির ৮৫তম জন্মদিন আজ

৪ ডিসেম্বর : নামাজের সময়সূচি

৪ ডিসেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে

সোমবার ঢাকার যেসব এলাকায় যাবেন না

রাশিফল অনুযায়ী কেমন যাবে আজকের দিনটি

নাশকতা ঠেকাতে কুলাউড়া রেলস্টেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সতর্কতা

ময়মনসিংহে ২৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

১০

শোকজ করায় আনন্দিত শামীম ওসমান

১১

ট্রেনে কাটা পড়ে দুই বৃদ্ধ নিহত

১২

শরিকদের সঙ্গে আজ বসবেন শেখ হাসিনা

১৩

হাঁসে ধান খাওয়ায় পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

১৪

মানিকগঞ্জ-২ আসনে ৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল

১৫

এমপি হতে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, বাছাইয়ে বাতিল হলো মনোনয়ন

১৬

স্বাধীনতা কাপের সেমিতে আবাহনী-রহমতগঞ্জ

১৭

টটেনহামের কাছেও পয়েন্ট খোয়ালো ম্যানসিটি

১৮

ভোলায় বিএনপির মশাল মিছিল

১৯

লালমনিরহাট-২ আসনে বাদ পড়লেন ৪ প্রার্থী

২০
X