চীনকে চাপে রাখতে এবার ঐক্যবদ্ধ হলো ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ করে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের একাধিপত্য কমাতে বদ্ধপরিকর কোয়াডের অন্যতম এই দুই সদস্য রাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে দেশ দুটি নিজের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদারের অঙ্গীকার করেছে। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
গত ৮ মার্চ তিন দিনের সফরে ভারতে আসেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানেজ। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বৃহত্তর অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব ত্বরান্বিত এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারে তারা একমত হন। বৈঠক শেষে আলবানেজ বলেন, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক বিরাজমান। উন্মুক্ত, উদার, আইনের শাসন মানা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তৈরির জন্য আমরা একত্রে কাজ করব। সন্ত্রাস দমনে বাড়ানো হবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন প্রকল্প, সৌরবিদ্যুৎ ও হাইড্রোজেন প্রকল্প নিয়ে চলতি বছরই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করব আমরা। এ ব্যাপারটিকে আমরা উভয়েই গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ, জীবাশ্ম জ্বালানি পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
মোদি বলেন, আমরা নিরাপত্তা প্রশ্নে সামগ্রিক কৌশলগত সম্পর্কে তৈরিতে জোর দিয়েছি। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে চতুর্দেশীয় অক্ষ কোয়াডের সহযোগিতা বেশ চমৎকার। আগামী মে মাসে মোদি অস্ট্রেলিয়া যাবেন কোয়াডের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে অংশ নিতে। সেপ্টেম্বরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আবারও ভারতে আসবেন আলবানেজ।
কূটনীতিকদের মতে, একদিকে চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া বাণিজ্য কমিয়ে আনছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য বাড়ানো লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় স্তরে গত এক বছরে যেভাবে দ্রুত ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে দুদেশ, তাতে কিছুটা চাপে রয়েছে শি জিনপিং সরকার।
গত বছর জুনে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে এক আলোচনায় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব বাড়ানোর ওপর জোর দেন। বৈঠকে সেটাই এগিয়ে নিলেন দুই শীর্ষ নেতা। বর্তমান ভূকৌশলগত রণনীতির প্রশ্নে এই অংশীদারত্ব খুবই তাৎপর্যপূণ। উভয় নেতা কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসে আর্থিক মদদের নেপথ্যে কারা রয়েছে, তা সবাই জানে। বিশেষ করে তারা যে পাকিস্তানকে বোঝাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কূটনীতিকদের। কারণ, জঙ্গিরা যাতে কোথাও আশ্রয় না পায়, কোনো দেশকে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার করতে না পারে, তা সুনিশ্চিত করতে ধারাবাহিকভাবে প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলেন দুই নেতা। যেসব কারণে সন্ত্রাসের জন্ম হয়, সেগুলোও চিহ্নিত করে নির্মূল করার চেষ্টার কথাও বলেন তারা। তাদের আলোচনায় ২৬/১১ মুম্বাই হামলা এবং পাঠানকোটের সেনাশিবিরে জঙ্গি হানার বিষয়টিও ছিল।
বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেন, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া উভয় রাষ্ট্রই সমুদ্রপথে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রপথে সহযোগিতার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। দুই দেশের মধ্যে মালাবার নৌ-মহড়া অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নৌ-সেনার মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আদান-প্রদান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে দুই দেশের কর্মকর্তারা বেশ কিছু সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ট্রেড এগ্রিমেন্ট (ইসিটিএ) নামের একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিটি ছিল এক দশকের মধ্যে উন্নত কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের প্রথম চুক্তি। যদিও এক দশকের বেশি সময় ধরে আরও বড় পরিসরের কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট (সিইসিএ) আলোচনার টেবিলেই আটকে আছে। ২০১১ সালে আলোচনা শুরু হলেও ২০১৬ সালে অচলাবস্থার কারণে তা বাতিল করা হয়। ২০২১ সালে আবার আলোচনা শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তা কোনো ফল বয়ে আনেনি।
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী সিইসিএ চুক্তি নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বিষয়ে একমত হয়েছি। আশা করছি চলতি বছরেই এটি চূড়ান্ত করতে পারব। এই চুক্তি দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনাকে বাস্তব করে তুলবে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের জনগণের জীবনমান উন্নত হবে। ২০২১ সালে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ২ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। ভারতের মতে, ইসিটিএ চুক্তির আওতায় এ বাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে।