বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা ৯ শতাংশ চালু রয়েছে; কিন্তু বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই নানা মহল থেকে বেঁধে দেওয়া এই সীমা তুলে দেওয়ার দাবি উঠছিল। অন্যদিকে দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের যে ঋণ নিয়েছে, সেখানেও এই ঋণের সুদে আরোপিত ৯ শতাংশের সীমা তুলে দিয়ে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে রোববার সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করল বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ‘লং টার্ম ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্লেনারি সেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ তুলে দেওয়া হবে। সুদহার নির্ধারণের এ প্রক্রিয়াটি বাজারের ওপর ‘রেফারেন্স’ রেট ছেড়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান তুলে ধরে গভর্নর জানান, সুদহারের একটি করিডোর দেওয়া হবে। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি রেফারেন্স রেট ঠিক করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেই রেফারেন্স রেটের ভিত্তিতে ঋণ ও বিনিয়োগের সুদহার ঠিক করবে। আমরা পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। একটি করিডোর দেওয়া হবে সুদহারের, সেটি হবে বাজারভিত্তিক রেফারেন্স রেট অনুযায়ী।’
এর আগে, ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে অর্থ দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহারের ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের একটি অঙ্ক নির্ধারণ করে দেবে বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী। তার সঙ্গে ঋণের খাত অনুযায়ী সুদের একটি সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ করে দেওয়া হবে; সেখানে কত শতাংশ বেশি নিতে পারবে ব্যাংকগুলো তা ঠিক করে দেওয়া হবে।
মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকলে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে আসতে থাকে ব্যাংকে। এ সময় অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় আমানতের সুদহার বাড়াতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত দিয়েছে, মূল্যস্ফীতির তিন মাসের গড় হারের চেয়ে আমানতের সুদহার কম হবে না। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের ঘরে রয়েছে কয়েক মাস ধরে।
এমন প্রেক্ষাপটে শুধু ভোক্তা ঋণের ওপর বিদ্যমান ৯ শতাংশ ঋণের সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ বেশি সুদ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিকভাবে দিলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এখনো লিখিতভাবে সার্কুলার আকারে দেয়নি।
আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ; এটি করতে চাহিদাজনিত সরবরাহ দিক নিয়ন্ত্রণ করার নীতিতে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরেকটি হচ্ছে, বিনিময় হার একটিতে নিয়ে আসা। বর্তমানে আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও নগদ উত্তোলনে বৈদেশিক মুদ্রার একাধিক রেট আছে। খুব শিগগির একটিতে নামিয়ে আনা হবে। সেইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তৃতীয়টি হচ্ছে ঋণ সুদহারের রেফারেন্স রেট ঠিক করা; যা প্রায় চূড়ান্ত করার কাজটি বাংলাদেশ ব্যাংক করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর উদ্যোগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এর আয়োজন শুরু হয়েছে গত শনিবার। সামিট উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরতে ১১ থেকে ১৩ মার্চ তিন দিনব্যাপী এ সামিটের আয়োজন করছে সংগঠনটি।
দ্বিতীয় দিনের এই অধিবেশনে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান। বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ব্রুমার অ্যান্ড পার্টনারস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালিদ কাদির, এইচবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার।