আতাউর রহমান
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩, ১০:২৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঝুঁকিতে রেখেই ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা ভবনটি

ঝুঁকিতে রেখেই ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা ভবনটি
পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার এলাকায় বিস্ফোরণের পর ধসে যাওয়া সাততলা ভবনটির ২৪টি কলামের মধ্যে ৯টিই পুরোপুরি গুঁড়িয়ে গেছে। আরও কয়েকটি কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে বিধ্বস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা পুরো ভবনটিই ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে আশপাশের কয়েকটি ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে ঝুঁকিতে রেখেই বিধ্বস্ত ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা করছেন রাজউকের প্রকৌশলীরা। ধসে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি পুরোপুরি অপসারণ বা ভাঙতে হবে, নাকি সংস্কার করলেই চলবে, গত ছয় দিনে সেই সিদ্ধান্ত না আসায় ওই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কও বন্ধ রয়েছে। এতে গুলিস্তান-সদরঘাটমুখী ওই সড়কে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আশপাশের বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন আতঙ্কে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘দুর্ঘটনার’ পর ওই এলাকার দোকানপাটে ক্রেতা আসতেও ভয় পাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দেড় শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে এখনো অন্তত ১৫ জন হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে ভবনটি হস্তান্তর করেছে। জমে থাকা গ্যাস থেকে ওই বিস্ফোরণ হয় বলে ধারণা করা হলেও পরিষ্কার কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন ও রাজউক। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিস্ফোরণ হওয়া ভবনটির ৯টি কলাম গুঁড়িয়ে গেছে। বিস্ফোরণের চাপে তিনতলা পর্যন্ত ছাদ ওপরের দিকে উঠে গেছে। এতে সাততলা ভবনটি পুরোপুরি ধসে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হয়েছে ঝুঁকি নিয়ে। যারা সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন, তারাও ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ভবনটি যদি পুরোপুরি ধসে যায়, তাহলে তা পূর্বদিকের সড়কে আছড়ে পড়তে পারে। এজন্য সামনের সড়কটি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ওই সড়কে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত হবে না। এদিকে রাজউকের একটি সূত্র বলছে, তারা ভবনটি আপাতত ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা করছে। তবে ওই বিস্ফোরণে পাশের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য ভবনও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞ সব পক্ষের মতামত ছাড়া ভবনটি অপসারণ বা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। সেই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। রাজউকের বংশাল এলাকার (জোন-৫/৩) অথরাইজড অফিসার রংগন মণ্ডল গতকাল রোববার কালবেলাকে বলেন, বিস্ফোরণ হওয়া ভবনটির ৯টি কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে পুরো ভবনের লোড ট্রান্সফার করতে পারবে না। মূল কলামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাতে ফের ধসে পড়ে আরও বড় ধরনের জানমালের ক্ষতি না হয়, সেজন্য তাদের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। এরই মধ্যে গুঁড়িয়ে যাওয়া কলামগুলোতে আর্টিফিশিয়ালভাবে স্টিলের কলাম স্থাপন করা হয়েছে। এর পরও এটিকে শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। রাজউকের এই প্রকৌশলী বলেন, ভবনটি পুরো অপসারণ করতে হবে, নাকি সংস্কার করে ঝুঁকিমুক্ত করা যাবে, সেজন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তারা সেটি করছেন। আপাতত ভবনটি ও আশপাশ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামনের সড়কেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তা ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে রাজউকের একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয়রা বলছেন, গত মঙ্গলবার থেকে গুলিস্তান-সদরঘাটমুখী গুরুত্বপূর্ণ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি (নর্থ সাউথ রোড) বন্ধ রয়েছে। ওই সড়কটি ঢাকার অন্যতম প্রবেশ পথ। তা ছাড়া জজকোর্ট, সিএমএম কোর্ট, সদরঘাট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কটি বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় রাত-দিন দীর্ঘ সময় ধরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পুরো এলাকাটি থমকে থাকছে। যানজট নিরসনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ফুলবাড়িয়া ট্রাফিক বক্সের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাসুম মোল্লা কালবেলাকে বলেন, গুলিস্তানের অদূরে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ থাকায় আশপাশেও যানজট হচ্ছে। তবে ওই সড়কের উল্টোপাশ দিয়ে যান চলাচল হচ্ছে। তা নির্বিঘ্ন করতে তারা ঘটনার পর থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ পাইপ অ্যান্ড টিউবওয়েল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রবিউল হক বাদশা কালবেলাকে বলেন, এত বড় বিস্ফোরণের পর স্বাভাবিকভাবেই সবাই আতঙ্কে। তা ছাড়া বাস্তবতার নিরিখেই হয়তো সড়ক বন্ধ রয়েছে। যদিও এতে ব্যবসায়ীদের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। তবে তারা চান, ঝুঁকিমুক্ত ব্যবসা করতে। লাইনে লিকেজ ছিল না, দাবি তিতাসের : এদিকে পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা তিতাস গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে জমা গ্যাস ও সেপটিক ট্যাঙ্কে জমে থাকা গ্যাস থেকে ওই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা করলেও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তাদের লাইনে কোনো লিকেজ ছিল না। গতকাল রোববার সংস্থাটির প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই দাবি করেছেন। ঘটনাস্থলে তিতাস গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আজাদ কালবেলাকে বলেন, ‘জমে থাকা তিতাস গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হলে আগুন ধরে যেত, তা কিন্তু হয়নি। তা ছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাস বাতাসের চেয়ে হালকা হওয়ায় তা জমে থাকার সুযোগ নেই। বেজমেন্টে বিস্ফোরণস্থলে তিতাসের লাইনও নেই।’ তাহলে কীভাবে বিস্ফোরণ, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, সেপটিক ট্যাঙ্ক বা মিথেন গ্যাস প্রাকৃতিক গ্যাসের চেয়ে ভারী। সেটি কুঠুরিতে জমতে পারে। বিস্ফোরণের কারণ বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। তার দাবি, ঘটনার পরই তারা যন্ত্র দিয়ে গ্যাস পরীক্ষা করেছেন। আজও (রোববার) পরীক্ষা করলেন। তাতে তাদের কোনো লাইন লিকেজের বিষয়টি ধরা পড়েনি। রাইজারও অক্ষত। গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হলে তো রাইজার অক্ষত থাকার কথা নয়। তিতাসের ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস সেন্টারের (ইএসএস) ব্যবস্থাপক আব্দুর রব কালবেলাকে বলেন, ভবনটির বেজমেন্টে এক সময়ে হোটেলের রান্নাঘরের বড় চুলা ছিল। ২০ বছর আগে সেই লাইন অপসারণ করা হয়েছে। এখন বেজমেন্টে কোনো লাইন নেই। বাণিজ্যিক সে লাইনটির সরবরাহ কমিয়ে ভবনটির ওপরের তলাগুলোতে আবাসিক সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তার দাবি, তারা প্রতি মাসে লাইন চেক করেন। এক মাস আগেও ভবনের আবাসিক গ্যাসলাইন পরীক্ষা করেছেন; কিন্তু লিকেজ ধরা পড়েনি। বিস্ফোরণের পর তাদের গ্যাসলাইন সরবরাহ অক্ষত রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা

ঝালকাঠিতে গভীর নলকূপে পানির সংকট

ব্যাট-বলে সাকিবকে শরীফুলের টেক্কা

দেশকে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতি বানাতেই এমন সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী

রাজবাড়ীতে ভাড়ায়চালিত বাইকারের বিরুদ্ধে যাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

সরবরাহ সচল হওয়ায় স্বস্তি ফিরছে ব্রাহ্মণপাড়ার সবজি বাজারে

আজ কোন এলাকায় কত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল

রিয়ালের জার্সিতে কবে মাঠে নামছেন এমবাপ্পে?

স্বেচ্ছায় কারাগারে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা

১০

অলিম্পিকে পদকের লড়াই হবে যে ইভেন্টগুলোতে (২৭ জুলাই)

১১

দক্ষিণ আমেরিকা নিয়ে নতুন ছক সৌদির

১২

রাশিয়ার সাবেক উপপ্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্রেপ্তার

১৩

ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে?

১৪

মানামার বাতাসে দূষণ সবচেয়ে বেশি, ঢাকার পরিস্থিতি কী

১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার বর্জ্যে দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ

১৬

স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

১৭

অলিম্পিকে নিষিদ্ধ ছিল যে দেশগুলো

১৮

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৯

উদ্বোধনীতে অ্যাথলেটদের চেয়ে বেশি উৎফুল্ল বাংলাদেশের কর্তারা

২০
X