আমজাদ হোসেন শিমুল ও শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
১৩ মার্চ ২০২৩, ১০:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

‘টাউন’ আর ‘গাউন’র গরমেই বারবার সংঘর্ষ

প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা। সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যায় দুপক্ষের মধ্যে তুমুল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় না থাকলেও কেন বারবার এমন সংঘর্ষ—কারণ অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এসব এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের স্থানীয় ভাবটা বড় করে দেখেন। স্থানীয় শক্তি তারা শিক্ষার্থীদের ওপর প্রয়োগ করেন। অন্যদিকে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠে পড়ালেখা করার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দাম্ভিকতা কাজ করে। এতে ছোটখাটো ঘটনাতেই বারবার সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। শুধু তাই নয়; এর পেছনে রাজনৈতিক উসকানিও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কেন স্থানীয়দের সঙ্গে বারবার শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়, তা জানতে গতকাল রোববার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে

জানা যায় ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। পুলিশ, রাবি প্রশাসন ও স্থানীয়দের দায়ী করেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ রাজনীতিকে দায়ী করছেন।

বিনোদপুর বিহাস এলাকার বাসিন্দা ফার্মেসির দোকানি ওয়াহেদুর রহমান বলেন, ‘একটি ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত বড় সংঘর্ষ সত্যিই দুঃখজনক। এ ঘটনায় রাবি প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা ছিল খুবই রহস্যজনক। তারা ইচ্ছা করলেই এ সংঘর্ষ এড়াতে পারত। প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতাই এর প্রধান কারণ।

ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী রাফিকুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনার পেছনেই রাজনীতি থাকে। প্রথমে শুরু হয় তুচ্ছ বা ছোট কোনো ঘটনা থেকে। এর পরই শুরু হয় রাজনীতির নানা অপকৌশল। আমার মনে হয়েছে, শনিবারের ঘটনাও রাজনীতির বাইরে নয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘শনিবার প্রথমে জামায়াতের এক সমর্থক ওই শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হয়। তিনি উত্তেজিত না হলে হয়তো এ ঘটনা ওখানেই থেমে যেত। পরে ছাত্রলীগ ঘটনাস্থলে আসায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়।’

বিনোদপুর বাজারের ফল ও কলা বিক্রেতা আলম, ফুটপাত ব্যবসায়ী নাতু শেখ এবং মুরগি ব্যবসায়ী বাবু বলেন, ‘হঠাৎ এ সংঘর্ষের ঘটনায় আমাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ, ব্যবসা করে খাই। ওরা তো শিক্ষিত। এটি বুঝতে পারি না, মারধর হলেই কি দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে হবে? আমাদের এই ক্ষতি কে এখন পূরণ করবে? আমরা কোনো রাজনীতি বুঝি না। আমার জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই চলি সংসার চালাতে।’

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল আহাদ বলেন, ‘স্থানীয়রা ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকাকে নিজেদের বাপ-দাদার সম্পত্তি মনে করে থাকে। ফলে সবসময় তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত খারাপ আচরণ করে। শিক্ষার্থীরা মুখ বুজে এটি সহ্য করলেও মাঝেমধ্যে যখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, তখন এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত শনিবার সন্ধ্যাও তাই হয়েছে। কেননা, একজন মূর্খ লোক কোনো কিছু না বুঝেই একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তুলবে, এটি কেউ মেনে নেবে না।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, ‘যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই দলের ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করে। তাদের ইন্ধনেই স্থানীয়রা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার দুঃসাহস দেখায়। এর আগে ক্যাম্পাস যখন শিবিরের দখলে ছিল, তখন তারা নিজেরা স্থানীয়দের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে ক্যাম্পাসে মাইকিং করত, স্থানীয়রা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। আপনারা সবাই এর প্রতিবাদ জানাতে শরিক হন। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা না বুঝেই স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের স্থানীয়রা বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকে। বর্তমানে প্রতিটি বাড়িতে শিক্ষার্থীদের সায়েস্তা করতে রামদা, হাসুয়াসহ দেশি অস্ত্র বানিয়ে রাখে বলেও যোগ করেন এই অধ্যাপক।

জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করি। শিক্ষার্থীদের জন্যই আমাদের রাজনীতি। সুতরাং, একজন শিক্ষার্থী স্থানীয়দের হাতে হামলার শিকার হবে, আর আমরা বসে বসে দেখব, এটি হতে পারে না। আমি শিক্ষার্থী হামলার খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম পরিস্থিতি শান্ত করতে; কিন্তু স্থানীয়রা আমাদের ওপরও চড়াও হয়। এটি আসলে মেনে নেওয়া যায় না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ কখনো চায় না, ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হোক, পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাক।’

রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, ‘স্থানীয়রা তাদের লোকালিটির ভাব দেখায়, আর শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার দাপট দেখায়। কেউ আসলে ছাড় দেয় না। এজন্যই প্রতিনিয়ত রাবি ক্যাম্পাসে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মনোনয়ন টেকাতে হাইকোর্টে যাবেন সালাহউদ্দিন

কুমিল্লায় মিষ্টি আলুর ভালো ফলনের আশা

নোয়াখালীতে বিকল্পধারার মহাসচিব ও নৌকার প্রার্থীসহ ১৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল

জোরালো হলো অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের গুঞ্জন

সুনামগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন, ভালো দামের প্রত্যাশা

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে নিয়োগ

যেখানে সুখ সেখানেই উষ্ঠা খাই আমি : মাহি

রিজভীর নেতৃত্বে উত্তরায় মহিলা দলের মিছিল পিকেটিং 

অবরোধ সফলে রাজধানীর আসাদগেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

গাজায় ৩.৪ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য পাঠাল তুরস্কের রেড ক্রিসেন্ট

১০

বগুড়া-৩ আসনে ৭ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

১১

অভিজ্ঞতা ছাড়াই পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসে চাকরি

১২

১২ দিন স্মৃতিসৌধে যেতে মানা

১৩

ফেলিক্সের গোলে অ্যাথলেটিকোকে হারাল বার্সেলোনা

১৪

শেখ মনির ৮৫তম জন্মদিন আজ

১৫

৪ ডিসেম্বর : নামাজের সময়সূচি

১৬

৪ ডিসেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে

১৭

সোমবার ঢাকার যেসব এলাকায় যাবেন না

১৮

রাশিফল অনুযায়ী কেমন যাবে আজকের দিনটি

১৯

নাশকতা ঠেকাতে কুলাউড়া রেলস্টেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সতর্কতা

২০
X