মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ১০:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আমদানিতে স্বস্তি, কমছে ঋণপত্র খোলা-নিষ্পত্তি

আমদানিতে স্বস্তি, কমছে ঋণপত্র খোলা-নিষ্পত্তি
অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রশ্নে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষিত রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপের বিস্ময়কর সাফল্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ডলারের ঘাটতি ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। বহুমুখী এই নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের ফলে আমদানিতে একদিকে কমেছে ঋণপত্র (এলসি) খোলার প্রবণতা এবং নিষ্পত্তির হার। অন্যদিকে ঠেকানো গেছে বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের মতো ঘটনাও। যার সুফল ধরা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাবে। আগে প্রতি মাসে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো, এখন কমে সেটি সাড়ে ৪ বিলিয়নে এসেছে। কমে যাওয়া এই আড়াই বিলিয়নের মধ্যে এক বিলিয়ন তৈরি পোশাক খাতের মেশিনারিজ আমদানি এবং বাকি দেড় বিলিয়নের অধিকাংশই ওভার ইনভয়েসিং হতো, যা এখন কমে এসেছে। এতে করে ডলারের ওপর বিগত সময় সৃষ্ট চাপও কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, গত দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আমদানিতে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ কম। আর একই সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। এ সময় সবচেয়ে বেশি কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্য, পেট্রোলিয়াম, শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি। বর্তমান অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমদানি কমাকে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘মঙ্গল’ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে এটারই খুব দরকার ছিল। আমদানি কমলে ডলারের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমদানি ব্যয় কমার কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা বলছেন, এক্ষেত্রে সমচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। গত বছরের ১৭ এপ্রিল এক সার্কুলারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাত-সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ১০ মে বিলাসপণ্য আমদানি কমাতে ক্ষেত্রবিশেষে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পাশাপাশি ডলারের চাপ কমাতে ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নেয় সরকার। অতি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের কর্তাদেরও বিদেশ সফর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়নও আপাতত বন্ধ রাখা হয়। এতে আমদানির প্রবণতা কমেছে। এটি ডলারের ওপর চাপ কমিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সুরক্ষিত করেছে। মূলত রিজার্ভ সুরক্ষিত থাকায় বাংলাদেশ এ যাত্রায় বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ‍স্থিতিশীলতা ফেরাতে সক্ষম হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—এসব কারণে বড় ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নানামুখী পদক্ষেপের কারণে একদিকে বাণিজ্যের আড়ালে টাকা পাচার বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে, অন্যদিকে অবাধ পণ্য আমদানি ঠেকানো গেছে। এতে ডলার সাশ্রয় হয়েছে। দেশ চাপমুক্ত হয়েছে। ফলে অর্থনীতিও স্থিতিশীলতার মধ্যে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আমদানির জন্য মোট ৫৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ২৭ শতাংশ কম। সেইসঙ্গে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬২ দশমিক ৪০ বিলিয়নের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে গত এপ্রিলে মাত্র ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়নের আমদানি এলসি খোলা হয়। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৪৯ শতাংশ কম। এরচেয়ে কম এলসি খোলা হয়েছিল ২০২০ সালের আগস্টে। করোনার কারণে দেশের অর্থনীতিতে তখন কিছুটা স্থবিরতা থাকায় ৩ দশমিক ৭০ বিলিয়নের এলসি খোলা হয় সে সময়। এ ছাড়া এপ্রিলে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি। আলোচ্য সময়ে এই খাতে এলসি খোলা হয়েছে ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৫৬ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি কমেছে ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিও অনেকাংশে কমে গেছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, যে ডলারের সংকট এখনো পুরোপুরি কাটেনি। এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি খোলা কমেছে ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর নিষ্পত্তি কমেছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ সময় মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানিতে এলসি খোলা কমেছে ৩১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর নিষ্পত্তি কমেছে ২৪ শতাংশ। সেই সঙ্গে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খোলা কমেছে ৩১ দশমিক ৮৫ শতাংশ আর নিষ্পত্তি কমেছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়ছে না রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স। ফলে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। সংকট সৃষ্টি হয় মার্কিন ডলারের। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে আসে। অর্থনীতির এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আমদানির লাগাম টানতে নানা শর্ত দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। যার প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ধারাবাহিকভাবে কমছে আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা এবং নিষ্পত্তির পরিমাণও। এর ফলে ডলারের সংকটও অনেকটা কেটে গেছে বলেও জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পপুলার ফার্মায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

পুতিন-মোদি বৈঠক, পারস্পরিক সাহায্যে জোর

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত, খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

২৩ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি 

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

‘সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে’

ইউএনএফপিএ এবং জাপান সরকারের মাঝে ৪০ কোটি টাকার সহায়তা চুক্তি

১০

‘রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে কোনো চক্রান্ত করার সুযোগ দেওয়া হবে না’

১১

বুলগেরিয়ায় পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

১২

ভিনির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে রিয়ালের অসাধারণ জয়

১৩

ঘূর্ণিঝড় ডানার তাণ্ডব চলবে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত

১৪

টানা দ্বিতীয় হারে এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায়

১৫

বঙ্গভবন এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের সরে যাওয়ার আহ্বান হাসনাত-সারজিসের

১৬

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য আফগানিস্তানের দল ঘোষণা

১৭

প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব হলেন মোজাম্মেল হক

১৮

প্রধান উপদেষ্টা সুস্থ আছেন, গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ

১৯

যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্পাদক কয়ছরকে জগন্নাথপুরে গণসংবর্ধনা

২০
X