হাসান আজাদ
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ০৮:৪০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চরম অর্থ সংকটে পেট্রোবাংলা

চরম অর্থ সংকটে পেট্রোবাংলা
চরম অর্থ সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এ অবস্থায় নগদ অর্থের সংস্থান করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ঋণ চেয়েছে সংস্থাটি। তাদের আবেদন করা ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ১৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর এ তারল্য সংকটের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের ভারসাম্যহীন ও কম মূল্য নির্ধারণকে দায়ী করেছে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ ঋণ পাওয়া না গেলে যথাসময়ে এলএনজির মূল্য পরিশোধ সম্ভব হবে না। এতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এ ছাড়া দেশীয় উৎপাদিত গ্যাসের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির (আইওসি) উৎপাদিত গ্যাসের মূল্য পরিশোধ, ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধ করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার কালবেলাকে বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় গ্রাহক বিদ্যুৎ খাত। এ খাতেই গ্যাস বিল ৬ মাসের বকেয়া। এ ছাড়া বিইআরসি যে দাম নির্ধারণ করেছে, এতে গত অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। আর গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত লোকসান ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। দাম না বাড়ালে এ লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে। তিনি জানান, বকেয়া ও লোকসানের কারণে আমাদের তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জ্বালানি সরবরাহ ঠিক রাখতে জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগের কাছে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ চেয়েছি। তারল্য সংকট নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মোট ৭ হাজার ১৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জ্বালানি বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য পেট্রোবাংলার প্রস্তাবিত ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটারে ২০ টাকা ৩০ পয়সা না করে বিইআরসি ১১ মাস পরে গত বছরের জুনে ভারসাম্যহীন মূল্য নির্ধারণ করে, প্রতি ঘনমিটারে ১১ টাকা ৯১ পয়সা। কমিশনের এ অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের কারণে শুধু ২০২১-২২ অর্থবছরে পেট্রোবাংলার ক্ষতি হয় ২৫ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কমপক্ষে ৮ হাজার ৭০৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঘাটতি হয়। আর গত ফেব্রুয়ারি বিল মাস থেকে কার্যকর করে ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য ভারিত গড়ে ২১ টাকা ১ পয়সা নির্ধারণ করায় একই মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত সময়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ হাজার ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ হিসেবে চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) মোট ঘাটতির পরিমাণ কমপক্ষে ১০ হাজার ৯০৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এ ঘাটতির বিপরীতে সরকারি অনুদান বাবদ এরই মধ্যে ৫ হাজার ৩১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। ফলে নিট সম্ভাব্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ হাজার ৫১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি করে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদাপূরণ ও বিইআরসি কর্তৃক ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের ভারসাম্যহীন মূল্য নির্ধারণের কারণে পেট্রোবাংলার গত বছরের জুন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫ হাজার ৪৮০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ক্ষতি/ঘাটতি পূরণে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে জমাকৃত অর্থ, সরকারি অনুদানের অর্থ, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণ, আওতাধীন কোম্পানিগুলোর পুঞ্জীভূত আয় থেকে অর্থ ব্যয় করা হয়। বর্তমানে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে এলএনজি আমদানি বায় নির্বাহে অবশিষ্ট কোনো অর্থ নেই। চিঠিতে আরও বলা হয়, ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য থেকে এলএনজি আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য এলএনজি চার্জ খাতের বিপরীতে অর্থ পাওয়া যায়। বিক্রয়-পরবর্তী তিন মাস সময়ের ব্যবধানে পেট্রোবাংলায় এলএনজি চার্জের অর্থ জমা হয়। চলতি বছরের মে থেকে বর্ধিত হারে এলএনজি চার্জ আদায় শুরু হলেও বিদ্যুৎ শ্রেণিতে ৬/৭ মাসের বকেয়া থাকার কারণে আগের মূল্য হারে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজি চার্জ পাওয়া যাবে। এ কারণে পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি-সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাহে নগদ অর্থের ঘাটতি দেখা দেবে। এ ছাড়া সার শ্রেণিতে ১৬ টাকার স্থলে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা হারে বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও সার শ্রেণিতে মোট সরবরাহকৃত গ্যাসের প্রায় ৪৩ থেকে ৪৫ শতাংশ সরবরাহ করার কারণে এবং ৬-৭ মাস বিল বকেয়া থাকার কারণে চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ১ হাজার ৭২ কোটি টাকা কম এলএনজি চার্জ পাওয়া যাবে। ফলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ১৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার নগদ অর্থের সংস্থান করতে হবে। গত মার্চ পর্যন্ত বিদ্যুৎ শ্রেণির ও সার শ্রেণির গ্রাহকদের কাছে গ্যাস বিল বাবদ বকেয়া অর্থের পরিমাণ যথাক্রমে মোট ৪ হাজার ৬০৮ কোটি ৯৫ লাখ এবং ১ হাজার ১৮৮ টাকা ৭৯ লাখ টাকা। ওই বকেয়ার পরিমাণ সর্বোচ্চ ২-৩ মাসের গ্যাস বিলের বেশি হওয়া উচিত নয়। বিদ্যুৎ ও সার শ্রেণির গ্রাহকদের কাছে বকেয়া বাবদ পাওনা অর্থ আদায় না হলে এবং চলতি মূলধন বাবদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ হিসেবে চাওয়া ৭ হাজার ১৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সংস্থান করা না গেলে আমদানি করা এলএনজি কার্গোর মূল্য পরিশোধ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

একদফা আন্দোলনের আহ্বান ছাত্রদলের

ডেমরার ডিএনডি খালে পড়ে থাকে কুকুর-বিড়ালের মৃতদেহ

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আপত্তি নেই যুক্তরাজ্যের

সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারে ইন্টারনেটের ধীরগতি

আলভারেজের দাম বেঁধে দিল ম্যানসিটি

জোট বেঁধে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় রাশিয়া-চীনের যুদ্ধবিমানের হানা

প্রাথমিক বিদ্যালয় কবে খুলবে, সিদ্ধান্ত রোববার

পাঁচ পদে ২০ জনকে নিয়োগ দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়

মোবাইল ইন্টারনেট কবে চালু হবে, জানা যাবে কাল

শিশু আহাদের দাফন দিয়ে বাড়িতে শুরু পারিবারিক কবরস্থানের

১০

প্যারিসে বেরসিক বৃষ্টিতে ভিজল বিশ্ব নেতারা

১১

শেখ হাসিনার অর্জন ধ্বংস করতে চায় হামলাকারীরা : ওবায়দুল কাদের

১২

ইরানের সঙ্গে সমঝোতা করতে চেয়েছিলেন বাইডেন

১৩

ইহুদিদের পছন্দ করেন না কমলা, বললেন ট্রাম্প

১৪

ন্যাটোর আদলে সামরিক জোট গঠনের প্রস্তাব ইসরায়েলের

১৫

যানজট সরিয়ে ভোগান্তি দূর করেন নবরু

১৬

বর্ষায় জমে উঠেছে চাক জালের হাট

১৭

ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী

১৮

সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা

১৯

ঝালকাঠিতে গভীর নলকূপে পানির সংকট

২০
X