রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ০৯:১৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নজরুল জন্মজয়ন্তী আজ

নজরুল জন্মজয়ন্তী আজ
আজ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মজয়ন্তী। সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের জয়গান গাওয়া বিংশ শতাব্দীর এই প্রধান বাঙালি কবি ও সংগীতকার মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য রেখে গেছেন, তা তুলনারহিত। তবে সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। নজরুল তার শেষ ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন, ‘কেউ বলেন আমার বাণী যবনম, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনোটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।’ তার জীবন শুরু হয়েছিল অকিঞ্চিৎকর পরিবেশে। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজন্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দি করেছিল। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র ১০ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয় তাকে। মক্তবের শিক্ষকতা, মসজিদের মুয়াজ্জিন থেকে শুরু করে রুটির দোকান—বহু জায়গায় কাজ করেছেন নজরুল। তার পাশাপাশি বাল্যবয়স থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা পরিসরে পদচারণা ছিল তার। নিজ কর্ম এবং অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন। সৈনিক জীবনে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক করপোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। বলা যায়, নজরুলের সাহিত্যচর্চার হাতেখড়ি করাচি সেনানিবাসে। সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন। যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন। এখান থেকেই তার সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু হয়। ১৯২১ সালে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। এই দুটি হচ্ছে কবিতা ও সংগীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং ‘বিদ্রোহী কবি’ অভিদায় সর্বজনবিদিত হয়ে ওঠেন। কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্যজীবনে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া ও প্রবন্ধের পাশাপাশি অজস্র গান রচনা করে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রাণপুরুষে পরিণত হয়েছেন। যে নজরুল সুগঠিত দেহ, অপরিমেয় স্বাস্থ্য ও প্রাণখোলা হাসির জন্য বিখ্যাত ছিলেন, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গুরুতর স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তার সব সক্রিয়তার অবসান হয়। ফলে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যু পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। তাকে রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নানা সংগঠনের পাশাপাশি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সর্বস্তরের মানুষ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবে। নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে নজরুল একাডেমি জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এবং ছায়ানট আয়োজন করেছে দুই দিনব্যাপী বিশেষ আয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অলিম্পিকে দ্বিতীয় রাউন্ডেই নাদাল-জোকোভিচ লড়াই

ফাইয়াজের কোমরে দড়ি পরানো ভুল ছিল, হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ

বৃষ্টি আরও বাড়বে, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

সাপের কামড়ে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যু

দিল্লির রাস্তায় হেনস্তার শিকার অভিনেত্রী, দিলেন ভয়ংকর বর্ণনা  

২৮ দিন পর মন্ত্রিসভার বৈঠক বসছে

হাসপাতালের নারী কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে

যুবককে পিষিয়ে দিয়ে গেল বিএমডব্লিউ

গুলিতে নিহত তামিমের বাবা বললেন, ‘সে ছাত্রলীগ করত’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে প্রতিদিন চলছে অসহায়দের জন্য খাবার বিতরণ

১০

বর্ষায় শেরপুরে চাঁই বিক্রির হিড়িক

১১

আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

১২

ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধে নামছেন এরদোয়ান?

১৩

বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে ভেষজ রত্ন বাসক

১৪

তামিমের ফেরা নিয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি

১৫

র‌্যাবের অভিযানে আরও ৩০ জন গ্রেপ্তার

১৬

আওয়ামী লীগের যৌথসভা কাল

১৭

‘গুলিতে আমার একমাত্র ছেলের বুক ফুটো হয়ে গেছে’

১৮

আজকের দিনটি কেমন যাবে আপনার?

১৯

নীলফামারীতে দাদন ব্যবসার ফাঁদে ঘরছাড়া শত পরিবার

২০
X