মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩, ০৯:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ই-কমার্সে আস্থা ফিরছে, লেনদেনও বাড়ছে

ই-কমার্সে আস্থা ফিরছে, লেনদেনও বাড়ছে
ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, ধামাকা শপিং, দালাল প্লাসসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে ই-কমার্স সেবার প্রতি গ্রাহকের আস্থা প্রায় উঠে গিয়েছিল। সম্প্রতি প্রতারিত হওয়া গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছে। এ খাত সুরক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ফলে ই-কমার্সে আবার গ্রাহকের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। লেনদেনও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের মার্চে ই-কমার্সে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১ হাজার ৭২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৫৭ কোটি টাকা বা ১৫ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৯০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে ই-কমার্সে লেনদেন বেড়েছে ৩২০ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ। মুন্সিব্জি ডটকমের হাত ধরে ২০০০ সালে দেশে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু। ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা শহর থেকে গ্রামে বিস্তৃত হলে ই-কমার্সের পরিসরও বাড়ে। এ সময় সেলবাজার ডটকম, এখানেই ডটকমসহ বেশকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দেশে অনলাইন কেনাবেচা শুরু করে। কিন্তু ইন্টারনেটের গতি কম থাকাসহ নানা কারণে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০১২ সালে বিক্রয় ডটকম ও ২০১৪ সালে দারাজের মতো প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। এদের হাত ধরেই দেশে ই-কমার্স ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটে। ২০২০ সালে করোনাকালে মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া একদম বন্ধ করে দিয়েছিল। আর তখন মানুষ বাধ্য হয়ে ই-কমার্সে ঝোঁকে। এ সময় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, ধামাকা শপিং, দালাল প্লাসের মতো প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক ছাড়ে পণ্য বিক্রি শুরু করে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কেনাকাটা বাড়ে কয়েক গুণ। প্রথম দিকে তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনেক কম দামে পণ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিলেও একসময় প্রতারণা শুরু করে। বেশি ক্রয়াদেশ নিয়ে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। আর হারাতে থাকে গ্রাহকের আস্থা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার হস্তক্ষেপ করে। গ্রেপ্তার হতে থাকেন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের জুনে ই-কমার্সে লেনদেন বেড়ে ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা হয়েছিল, যা রেকর্ড। কিন্তু প্রতারণার প্রভাবে এক মাসের ব্যবধানে তা কমে দাঁড়ায় ৭৪২ কোটি টাকা। তবে সরকারের ডিজিটাল কমার্স আইন-২০২১ প্রণয়নের পর গত বছরের এপ্রিলে আবার হাজার কোটির মাইলফলক স্পর্শ করে এই খাতের বেচাকেনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ই-কমার্সে সরকারের বিশেষ নজরের কারণে প্রতারণা অনেকটাই কমে এসেছে। এ ছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ নিজস্ব সেটেলমেন্ট হিসেবে নেওয়াসহ নানা নীতির কারণে এই খাতে আস্থা ফিরছে মানুষের। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি সম্প্রতি এই খাত নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী চার বছরে ই-কমার্সের বাজার আরও প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বাড়বে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সাল শেষে ই-কমার্সের বাজারের আকার ছিল ৬৬০ কোটি ডলার। ২০২৬ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের মে ও জুলাই বাদ দিলে প্রতি মাসেই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে ই-কমার্সে। গত বছরের মে মাসে লেনদেন হয়েছিল ৮৬৭ কোটি টাকা। জুনে ১ হাজার ৩ কোটি আর জুলাইয়ে হয় ৯৯২ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগস্টে ১ হাজার ৪১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৮৬ কোটি, অক্টোবরে ১ হাজার ১৩৫ কোটি, নভেম্বরে ১ হাজার ১৬২ কোটি, ডিসেম্বরে ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। আর চলতি বছরের শুরুতেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৭৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৭২ কোটি আর মার্চে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ই-কমার্স খাতে অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এলে ওই বছরের জুনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশিকা জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই নির্দেশনার আলোকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। এতে বলা হয়েছিল, পরিশোধ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্স গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ নিজস্ব সেটেলমেন্ট হিসেবে ধারণ করবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহের পর দাম পাবে। লেনদেন নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যাংক, এমএফএস বা ই-ওয়ালেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারবে। তবে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এখনো এসব নির্দেশনা মানছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া গ্রাহকরা নিজেদের পাওনা টাকা ফেরত পাচ্ছেন ধীরগতিতে। মোট ২৭ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকরা পান ৫২৫ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ১৩ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ৩৬১ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। এখনো ১৬৪ কোটি টাকা ফেরত পাননি গ্রাহকরা। এ টাকা অবশ্য ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর থেকে ২৭টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে পণ্য ক্রয়াদেশের বিপরীতে গ্রাহকদের টাকা আটকে ছিল। টাকাগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লেনদেন পরিশোধকারী কোম্পানিতে (পেমেন্ট গেটওয়ে) আটকে ছিল এবং আছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বলে আসছে, ২০২১ সালের ৩০ জুনের পরে দেওয়া টাকা গ্রাহকরা ফেরত পাবেন। কেননা, এদিন থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক ‘এসক্রো’ ব্যবস্থা চালু করে। এ ব্যবস্থা হচ্ছে, গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছানোর পর টাকা পরিশোধ নিশ্চিত করা। কিন্তু তা মেনে চলেনি অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত 

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ইসলামী আন্দোলন আমিরের শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জিয়াউর রহমানের বাড়িতে দোয়ার আয়োজন

গুলশান কার্যালয়ে শোক বই খুলবে বিএনপি

খালেদা জিয়ার শাসনামলে বদলে যায় ক্রীড়াঙ্গনের গতিপথ

খালেদা জিয়ার ইন্তেকাল একটি যুগের সমাপ্তি : বাংলাদেশ ন্যাপ

খালেদা জিয়া সত্য, ন্যায় ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবিচল : ডাকসু

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীর ফেসবুক পোস্ট

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাসুদেব ধর ও সন্তোষ শর্মার শোক

খালেদা জিয়ার প্রয়াণে তারকাদের শোক প্রকাশ

১০

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা

১১

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ইসির

১২

খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে: রাষ্ট্রপতি

১৩

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের শোক

১৪

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাফুফের শোক, খেলা স্থগিত

১৫

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আ.লীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার শোক

১৬

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঐক্য পরিষদের শোক

১৭

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঢাবি উপাচার্যের শোক

১৮

খালেদা জিয়ার জানাজা কোথায় কখন, জানালেন সালাহউদ্দিন আহমদ

১৯

ফার্স্ট লেডি থেকে প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়ার ১০ রেকর্ড

২০
X