জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। এই নীতি ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে বড় ধরনের সিগন্যাল বলেও মনে করে দলটি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভোট রিগিং হচ্ছে, ভোটের দিন ছাড়াও ভোট রিগিং হয় বাংলাদেশে। এটি বন্ধ করার জন্য আমরা স্বাগত জানাই তাদের এ পদক্ষেপকে। এখানে যাদের কথা বলেছে, একেবারে সরাসরি যাদের কথা বলেছে এবং তাদের যে ম্যানশন করেছে, এটি একটি বড় পদক্ষেপ। এটি তাদের জন্য বড় মেসেজ। এই মেসেজ গ্রহণ না করে আবারও যদি বাংলাদেশে ভোট চুরির প্রক্রিয়ায় তারা অব্যাহতভাবে কাজ করতে থাকে, তাহলে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের চিন্তা করা দরকার।
স্বাগত জানানোর কারণ হিসেবে আমীর খসরু বলেন, আমরা এটিকে (যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি) ওয়েলকাম করছি এই কারণে যে, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মানুষের নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা, আমি মনে করি এই ধরনের একটি পদক্ষেপ আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এটির মাধ্যমে যে সব কিছু হবে, তা না; কিন্তু এটি একটি সিগন্যাল, একটি মেসেজ যে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না, বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কা আছে। এই যাদের কথা (ভিসা নীতিতে) উল্লেখ করেছে এই লোকগুলো, এই সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এবং যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আমীর খসরু বলেন, এটি একেবারে কম্প্রিহেনসিভলি যারা যারা নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য, নির্বাচনকে দখল করার জন্য, ভোট চুরির মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যত ধরনের সংগঠন-ব্যক্তিসহ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সরাসরি অ্যাড্রেস করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি বিএনপির জন্য সফলতা কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এটি সফলতার বিষয় নয়। সফলতা হবে বাংলাদেশের মানুষ যেদিন ভোট প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে সরকার নির্বাচিত করতে পারবে, সেদিন হবে বাংলাদেশের জনগণের সফলতা। তিনি আরও বলেন, সেই উদ্দেশ্যে অনেক পদক্ষেপের মধ্যে এটি (যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নীতি) হয়তো ভালো পদক্ষেপ। দেশবাসী এটি সাদরে গ্রহণ করেছে। এটির মাধ্যমে তারা আশা করছে, যারা ভোট চুরির সঙ্গে এখন থেকে জড়িত হয়ে গেছে, সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হোক, গণমাধ্যম হোক, সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে হোক, সবার প্রতি এটি একটি পরিষ্কার বার্তা।
এই ভিসা নীতির ঘোষণায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশকে অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশে মানবাধিকার, আইনের শাসন, জনগণের নিরাপত্তা ইত্যাদি, এই যে মুক্তির সংগ্রামের পথে এটি একটি পদক্ষেপ। অনেক পদক্ষেপ এখানে নিতে হবে, যেন তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) আবারও ভোট চুরি করে দেশের ক্ষমতা দখল করতে না পারে।
আমীর খসরু বলেন, অলরেডি ভোট চুরি চলছে। এই যে বিএনপির ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, এটি কি ভোট চুরি না, মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, এটি কি ভোট চুরি না, এই যে বিএনপির নেতাকর্মীদের গুলি করছে, গ্রেপ্তার করছে, এটি কি ভোট চুরি না। ভোট চুরি চলছে, গণহত্যা চলছে। মানুষকে প্রতিদিন অত্যাচার করা হচ্ছে। এটিকে মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
সরকারি দল যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন নয়, বিএনপি কি উদ্বিগ্ন— এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, সরকার উদ্বিগ্ন না হলে ভালো কথা। তাহলে তাদের বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার, আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা এগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। তা না দিলে তাদের উদ্বিগ্ন হতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে না দিয়ে আবার যদি মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, তাহলে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকবে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এই গাজীপুরে সামান্য একজন প্রাক্তন মেয়রকে (জাহাঙ্গীর আলম) তারা সহ্য করতে পারছে না। তাকে নির্বাচন করতে দেয়নি। লোকজন ভোট কাকে দেবে? ভোটের ওপর কোনো আস্থা আছে?
এ সময়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু ও মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসায় একটি বৈঠকে যোগ দেয়। সেখানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।