শিশু রাত জাগলে

এখন বাবা-মায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশু রাত জাগছে। কখনো আবার শিশু ঘুমাচ্ছে না বলে বাবা-মাকে জেগে থাকতে হচ্ছে। অথচ শিশুর পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য ঘুম খুবই জরুরি। শিশু কেন রাত জাগে কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুমালে কী করবেন জানাচ্ছেন ডা. তাহমিনা করিম অ্যানি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে দিনে অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের প্রয়োজন হলেও শিশুদের ঘুমের চাহিদা আরেকটু বেশি। সদ্যোজাত শিশুদের প্রথম এক মাস দৈনিক ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। ১-৬ মাস বয়সী শিশুদের ঘুমের প্রয়োজন দৈনিক ১৪-১৫ ঘণ্টা। এ বয়সে শিশু ধীরে ধীরে দিন-রাতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করে। তাই ঘুম ক্রমেই নিয়মিত ও দীর্ঘ হয়। ছয় মাস বা এক বছর বয়স থেকে শিশুদের ঘুমের আদল মোটামুটি বড়দের মতো হয়ে যায়। দৈনিক ১৩-১৪ ঘণ্টা ঘুমালেও, দিনের বেলা দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয় না ঘুম। স্কুলগামী অর্থাৎ ৫ বছরের পর থেকে শিশুর আদর্শ ঘুম হবে দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা। বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের সময়ের কিছুটা পার্থক্য হতেই পারে। তবে খুব বেশি পার্থক্য হলে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। সমস্যা কখন? প্রতিটি শিশুই আলাদা। সব ক্ষেত্রে গড় থেকে কম ঘুমানোর মানে এই নয় যে আপনার শিশুর কোনো সমস্যা আছে। শিশুর ঘুমের সমস্যার কারণ হিসেবে অস্থিরতা, খুব ঘন ঘন রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া, ঘুমের ব্যাঘাতযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস এবং কিছু অসুখ যা ঘুমের মধ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এসব অসুখের মধ্যে জিইআরডি (খাদ্যনালির রোগ) উল্লেখযোগ্য। কিন্ডারগার্টেনের প্রি-স্কুলারদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে বাচ্চারা কম ঘুমায় তাদের নেতিবাচক ব্যবহার গ্রহণ করার ক্ষমতা কম হয়। এমন শিশুদের সামাজিক দক্ষতা এবং ভোকাবুলারি ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়। কীভাবে বুঝবেন শিশু নিয়মিত কম ঘুমালে খেয়াল করুন তার মধ্যে অতি ক্লান্তির লক্ষণ রয়েছে কিনা। যেমন মানুষ, খেলা ও পরিবেশের প্রতি অনাগ্রহ। হাত-মুখের অঙ্গভঙ্গি খেয়াল করুন, কান টানছে কিনা, বারবার চোখ ঘষছে কিনা। চোখের পাতা বারবার বন্ধ হচ্ছে, খুলছে কিনা। এক বছরের চেয়ে বড় বাচ্চার বেলায় হাঁপানি বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা। কেউ কেউ রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও সক্রিয় ও দুষ্টু হয়ে ওঠে। বিভিন্ন নেতিবাচক আবেগ যেমন রাগ, জেদ করে। শান্ত হতে বেশি সময় নেয়, খাবারে অনীহা, অল্প ব্যথাতেই বেশি কান্না করে। এসব লক্ষণ থাকলে শিশুর কম ঘুম নিয়ে সচেতন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কী করবেন শিশুকে প্রাকৃতিক দিনের আলোতে বের করুন এবং আপনার শিশুকে আপনার দিনের ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে জড়িত করুন, খেলাধুলা করুন, বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান, শিশুর সঙ্গে ভালো সময় কাটান। মোবাইল, টিভি এবং গ্যাজেট থেকে যতটা পারা যায় দূরে রাখাই ভালো। খেয়াল রাখুন শিশুর স্ক্রিন টাইম যেন দিনে এক-দুই ঘণ্টার বেশি না হয়। অনেক বাবা-মা নিজেরা জেগে থেকে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেন। এটা শিশুর দেরিতে ঘুমানোর একটি কারণ হতে পারে আলো। রাতে ঘুমানোর আগে ঘরের সব আলো বন্ধ করে দিলে শিশুর ঘুমানো সহজ হবে। রাত ১০-১১টার মধ্যেই ঘরের সব আলো বন্ধ করে দিন। শিশু রাতে ঘুমোতে না চাইলে রাগ করা যাবে না। শিশুকে স্থির হতে সাহায্য করুন। কিছুক্ষণ শারীরিক ব্যায়াম হয় এমন খেলাতে উদ্বুদ্ধ করুন। তারপর গল্পচ্ছলে বিছানায় শুইয়ে ঘর অন্ধকার করলে শিশু ঘুমিয়ে যাবে। এ অভ্যাস তৈরিতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। বাবা-মাকে ধৈর্য নিয়ে এ সময়ে চেষ্টা করে যেতে হবে। শিশুকে গান শুনিয়ে ঘুমের অভ্যাস করুন। হালকা করে পিঠ চাপড় দিতে পারেন। নিয়মিত ঘুমের আগে একই কাজ করলে শিশুর মস্তিষ্ক সেগুলোতে ঘুমের সিগন্যাল হিসেবে নেবে। এর পরও শিশুর ঘুমের অনীহা থাকলে অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণগুলো খেয়াল করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।