গাজী আরিফ মান্নান
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা বাস্তবমুখী হওয়া প্রয়োজন

কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা বাস্তবমুখী হওয়া প্রয়োজন
মাধ্যমিক পর্যায়ে কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক সফলতা আসছে না, তার একমাত্র কারণ কৃষি এবং কম্পিউটার শিক্ষাকে বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের দেশে কৃষি ও কম্পিউটার বিষয়কে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহারিক অংশকে ব্যবহারিক খাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের হাতে-কলমে কাজ বা ব্যবহারিক কাজ শেখা ছাড়া একজন শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষার জন্য কিছু প্রশ্ন পড়ে পাস করে পরবর্তী শ্রেণিতে গমন করে। এভাবে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়। বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে শিক্ষার্থীদের কৃষি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। যে দেশ কৃষি ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে সেই দেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত। ষষ্ঠ-দশম শ্রেণি পর্যন্ত কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অনেক আগে থেকেই, তারপরও শিক্ষার্থীরা কৃষি ও কম্পিউটারে পরিপূর্ণ দক্ষতা বা জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের সবার আগে কম্পিউটার বিষয় রিলেটেড প্রোগ্রামগুলোর ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করা দরকার এবং সেইসঙ্গে কৃষি বিষয়ের বাস্তব জ্ঞান অর্জন করার জন্য জমি/ক্ষেতে কৃষি ফলফলাদি চাষবাস সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান আহরণ করা দরকার। এই জ্ঞান অর্জন করতে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ল্যাব ও কৃষি দক্ষতা অর্জন করতে নিয়মিত কৃষিজমি বা মাঠে কাজ করা দরকার। শুধু বইয়ের পড়া পড়ে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করা যায় না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে একদিকে যেমন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী বা শিক্ষার্থী সৃষ্টি করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। একদিকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কৃষিপণ্যগুলো বাজারজাতকরণের নতুন নতুন ধারণা অর্জন করতে পারবে, অন্যদিকে কৃষিপণ্য সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। সবার আগে প্রয়োজন প্রত্যেক বিদ্যালয়ে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন এবং কম্পিউটার শেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক শ্রেণিতে যদি কম্পিউটার শিক্ষা বাস্তবমুখী করা যায়, তাহলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ দিতে হবে, তাহলে এগিয়ে যাবে তাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন প্রযুক্তির শিক্ষা। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হলে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা দিতে হবে। প্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন শিক্ষার্থী সহজেই নিজেকে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষায় সর্বোত্তম সহযোগিতা বা কম্পিউটার ল্যাব এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। বর্তমান সময়ের তরুণ-যুবকরা কৃষির প্রতি খুব একটা আকৃষ্ট নয়। তারা শুধু বইয়ের মধ্যে কৃষি শিক্ষার জ্ঞানকে আবদ্ধ করে রেখেছে। শিক্ষার্থীরা মাঠে-ময়দানে কাজ না করার ফলে তাদের বাস্তব জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীদের কৃষির জ্ঞান ফলপ্রসূ করার জন্য শ্রেণি ভাগ করে প্রত্যেক দলকে একটি করে প্লট দিয়ে কৃষিকাজ করানো উচিত। প্রত্যেক দলের দলনেতার অধীনে একেকটি দল একেক রকমের শাকসবজি বা ধান, গম, ভুট্টা বা মৌসুমি ফসল চাষ করবে। কৃষিকাজে যে দলের উৎপাদিত ফসল ভালো হবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করলে তারা যেমন আনন্দ পাবে, তেমনি শিক্ষার্থীরা উৎসাহী হবে, এতে তারা কৃষির প্রতি সহজেই অনুপ্রাণিত হবে। আবার এসব উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকা শিক্ষার্থীদের ভাগ করে দিলে তারা বই-খাতা-কলম কিনতে বা সুন্দরভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার খরচ নির্বাহ করতে পারবে। একদিকে যেমন তারা কৃষিকে জানবে, অন্যদিকে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা বা গাইডলাইন দেবেন কৃষি বিষয়ের শিক্ষক। এ জন্য দরকার প্রয়োজনীয় আধুনিক কৃষি উপকরণ, যাতে শিক্ষার্থীরা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরিচিতি হতে পারে এবং এর ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে জানতে পারে। এই বাস্তবমুখী কৃষিই একদিন শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে কৃষিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার। আজকের শিক্ষার্থীদের যদি কৃষিকাজে জড়ানো যায় তাহলে বদলে যাবে বাংলাদেশের কৃষির প্রকৃতি। কৃষিতে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিপণ্য রপ্তানিতেও আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে, এগিয়ে যাবে দেশ ও কৃষি। তরুণ-যুবকদের যদি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে তারাও একসময় নিজেরা যেমন কৃষিকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেবে, তেমনি অন্যরাও কৃষির সঙ্গে জড়াবে নিঃসন্দেহ। এতে দেখা যাবে যে, প্রতিটি বাড়িতেই তৈরি হবে একেকটি কৃষি খামার। এই খামারের উৎপাদিত ফসল নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি ফসল বাজারেও বিক্রি করতে পারবে। পরিশেষে কম্পিউটার শিক্ষাকে যদি হাতে-কলমে ও কৃষি শিক্ষাকে যদি বাস্তবভিত্তিক করার জন্য মাঠে-ময়দানে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করানো যায়, তাহলে এগিয়ে যাবে কৃষি ও প্রযুক্তি। আবার এই কৃষিকে প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনাবেচা করা হয়। এই প্রযুক্তি একদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য যেমনি সুবিধা দিয়েছে তেমনি আবার সহজ করে দিয়েছে জীবনধারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বানরের উৎপাতে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

‘সংস্কার কমিশনকে বলেছি, ৫ আগস্টের আগে জুলাই সনদ করতে হবে’

কোনো দলের সম্পদ নয়, গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের : সারজিস

ফিফার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও এক ক্লাব

বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটি গঠন

ওসি পদায়নে ২২ দফা নীতিমালা

সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক সম্পত্তি মেরামতে সহযোগিতা দেবে ভার‍ত

যশোরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সেনাবাহিনীর সহায়তা

নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা ইমরান খানের সাবেক স্ত্রীর

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে উত্তরায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল 

১০

কিছু ষড়যন্ত্রকারী দেশের স্থিতিশীলতা ব্যাহত করতে চায় : এনডিপি

১১

চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন জামায়াতের আমির

১২

বাঙলা কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবির ও সেক্রেটারি সাকিব

১৩

উপুড় হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস, ডেকে আনছেন যেসব ক্ষতি

১৪

পাল্টা শুল্ক নিয়ে তৃতীয় ধাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার

১৫

পুলিশ সদর দপ্তরের পর্যালোচনা / ছয় মাসে ২৭ হত্যার কোনোটিই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নয়

১৬

‘আঙুল তোলার আগে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখুন’

১৭

কিডনির সমস্যা আছে কি না জানবেন যেভাবে

১৮

৩ দলকে স্বেচ্ছাসেবক দলের হুঁশিয়ারি

১৯

আসিফ মাহমুদের প্রশ্ন / ‘নৌকা’ মার্কাটা কোন বিবেচনায় শিডিউলভুক্ত করতে পাঠালেন

২০
X