শেখ হারুন
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস

পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস
স্বাস্থ্য সচেতনতা, অভ্যাস ও রুচির ভিন্নতার কারণে দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসছে। পুষ্টি চাহিদা পূরণ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের কারণে এ ধরনের পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। বর্তমানে দেশের মানুষের মধ্যে মাছ, মাংস, দুধ, ফল ও শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। কমেছে ভাত খাওয়ার প্রবণতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মানুষের মাঝে খাদ্য গ্রহণে পরিবর্তন এসেছে। গত ৬ বছরের ব্যবধানে খাদ্য-সংক্রান্ত প্রায় সব সূচকেই বেড়েছে খাবার গ্রহণের পরিমাণ। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ায় ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। একই সঙ্গে রুচির পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি গ্রাম ও শহরের বাজারেও নানা ধরনের ফলমূল, শাকসবজি পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে মানুষের খাবার গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের ১২ এপ্রিল খানার আয়-ব্যয় জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস। এক বছর ধরে তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। সারা দেশের ৭২০টি নমুনা এলাকা থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২০টি করে মোট ১৪ হাজার ৪০০ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গত বছরের শুরুর দিন থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরব্যাপী এ তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের তুলনায় গত বছর মানুষ শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেয়েছেন। সে সময় গ্রামের একজন মানুষ দৈনিক ১৬৪ দশমিক ৮ গ্রাম শাকসবজি খেলেও বর্তমানে খাচ্ছেন ২০২ দশমিক ২ গ্রাম। আর শহরের মানুষ বর্তমানে খাচ্ছেন ২০১ দশমিক ৩ গ্রাম, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৭৪ দশমিক ১ গ্রাম। বর্তমানে গ্রামের একজন মানুষ দিনে ৬৭ দশমিক ৭ গ্রাম মাছ খাচ্ছেন। ২০১৬ সালে যার পরিমাণ ছিল ৬০ দশমিক ৬ গ্রাম। ওই সময় শহরের একজন মানুষ দৈনিক ৬৭ দশমিক ৯ গ্রাম মাছ খেলেও বর্তমানে খাচ্ছেন ৬৮ দশমিক ২ গ্রাম। ২০১৬ সালে গ্রামের একজন মানুষ দিনে মাংস খেতেন ২২ দশমিক ১ গ্রাম। বর্তমানে এটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশে। শহরের মানুষ গড়ে দৈনিক ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ মাংস খেলেও এখন খাচ্ছেন ৫০ দশমিক ৩ গ্রাম। একই সময়ে গ্রামের একজন মানুষ দিনে গড়ে দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতেন ২৬ দশমিক ৩ গ্রাম, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১ গ্রাম, শহরের একজন মানুষ দৈনিক ৩০ গ্রাম খেলেও এখন খাচ্ছেন ৩৮ দশমিক ৫ গ্রাম। গত ছয় বছরে ফল খাওয়া উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দিয়েছে গ্রাম এবং শহরের মানুষ। বর্তমানে শহরের একজন মানুষ দৈনিক ১০৫ দশমিক ৩ গ্রাম ফল খাচ্ছেন, ২০১৬ সালে খেতেন মাত্র ৪৫ দশমিক ২ গ্রাম। গ্রামের একজন মানুষ দৈনিক ফল খাচ্ছেন ৯০ দশমিক ৯ গ্রাম, অথচ ২০১৬ সালে খেতেন মাত্র ৩২ দশমিক ২ গ্রাম। তবে দেশের মানুষের মধ্যে ভাত খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে গ্রামের একজন মানুষ দিনে ৩৮৬ দশমিক ১ গ্রাম চালের ভাত খেলেও বর্তমানে ৩৪৯ দশমিক ১ শতাংশ চালের ভাত খাচ্ছেন। শহরের একজন মানুষ দিনে ভাত খাচ্ছেন ২৮৪ দশমিক ৭ গ্রাম, যেখানে ২০১৬ সালে খেতেন ৩১৬ দশমিক ৭ গ্রাম। বিবিএস বলছে, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর সুষম খাবার মানুষের সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনের অন্যতম নিয়ামক। খাদ্য গ্রহণের বিষয়টি খাদ্যের প্রাচুর্যতা, প্রাপ্যতা, খাদ্যাভ্যাস ও দামের ওপর নির্ভর করে। দানাদার ফল ও শাকসবজি-জাতীয় পণ্যের সরবরাহ এবং দামে মৌসুমগত ভিন্নতা থাকায় পরিবারের খাদ্য গ্রহণের মাত্র নিরূপণের জন্য জরিপে এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, গড় আয় ব্যয় ২০১৬ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এবং ছয় বছরের ব্যবধানে মানুষের অভ্যাসে পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং আয় বৃদ্ধি এবং অভ্যাসের পরিবর্তণের কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে। ছয় বছরের ব্যবধানে মানুষের মাথাপিছু বায় বেড়েছে। আয় বাড়লে সাধারণত মানুষ খাবারের পেছনে বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে মানুষ চাল খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছে। সুতরাং চালের ওপর খরচ কমে যাওয়ায় অন্য খাবারের পেছনে মানুষ বেশি খরচ করছে। তিনি বলেন, ফলমূল এবং শাকসবজির উৎপাদন এবং সরবরাহ বাড়ার কারণেই মূলত এগুলোর চাহিদা বেড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন বলেন, খাবারের পরিমাণের চেয়ে মান বিবেচনা জরুরি। মানুষের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন অনুযায়ী খাবারে প্রাধান্য দিতে হবে। মানুষ ভাত খাওয়া কমিয়ে প্রোটিন, ফলমূল ও শাকসবজির প্রতি ঝুঁকছে—এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনার প্রভাবে খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাবে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে কী পরিবর্তন হয়েছে, এ প্রতিবেদন থেকে সেটি জানা যায়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতের পদক্ষেপে ‘পাকিস্তানও উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত’

অস্ত্রের মুখে দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল আরকান আর্মি

স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে বিষপান, অতঃপর...

‘অস্বাস্থ্যকর’ ঢাকার বাতাস 

করতোয়ার পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা

কাশ্মীরে হামলা / এটি কি ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ নাটক?

কেমন থাকবে আজ ঢাকার আবহাওয়া

কৃষকের আধাপাকা ধান কেটে নিলেন যুবদল নেতা

পোপের মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক বাংলাদেশে

সিন্ধু চুক্তি স্থগিত / জরুরি বৈঠকে বসছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা কমিটি

১০

ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া অসুস্থ শিশুর দায়িত্ব নিলেন বিএনপি নেতা

১১

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১২

২৪ এপ্রিল : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৩

২৪ এপ্রিল : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৪

কাশ্মীর নিয়ে টানটান উত্তেজনা, যুদ্ধের পথে ভারত ও পাকিস্তান?

১৫

নির্বাচন শুধু প্রলম্বিত নয়, বানচাল করতেও যড়যন্ত্র চলছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

১৬

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করল মহিলা জামায়াত

১৭

বাঙলা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটির নেতৃত্বে সাদী-জামিল

১৮

জবি রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবি শিক্ষার্থীদের

১৯

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে প্রীতি সমাবেশ / জালেমদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : জামায়াত আমির

২০
X