স্বল্প আয়ের পরিবারে ১৮ বছরের আগে গর্ভধারণের প্রবণতা বেশি। আজ বুধবার প্রকাশিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকার একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সভায় ‘মনিটরিং দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব এসডিজিস ফর এনশিওরিং গার্লস অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক জরিপটি প্রকাশ করা হয়। ওয়াই-মুভস প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ইয়েস বাংলাদেশ এবং ইউথ ফর চেঞ্জ।
জুন ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২ সময়কালে যুবদলের মাধ্যমে জরিপটির উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় দেশের ৬৪ জেলায় ৩ হাজার ১৭৫টি পরিবার, বিশেষ করে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীর অংশগ্রহণে এই জরিপ পরিচালিত হয়।
জরিপে দেখা যায়, সর্বনিম্ন আয়ের পরিবারে (মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা) ১৮ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি (৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ)। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশই জানান যে, তারা ১৮ বছর বয়সের আগেই গর্ভধারণ করেন, যার হার রংপুরে সর্বোচ্চ (৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ)।
জরিপে আরও দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের (১৪-৪৯ বছর বয়সী নারী) ৯৩ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত এবং ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ তা অনুসরণ করেন।
৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারে পুরুষ এবং নারী সদস্য একত্রে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। এই পদ্ধতি সম্পর্কে তারা তথ্য পান মূলত টেলিভিশন (৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ), কমিউনিটি ওয়ার্কার (৩৩ দশমিক ২ শতাংশ) এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (২৯ দশমিক ৫ শতাংশ)।
যুব উন্নয়ন সংস্থা ইয়েস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদ মূল প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, জরিপকৃতদের ১৮ শতাংশ নারীই জানিয়েছেন, তারা গত ১২ মাসে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। ২১ দশমিক ৯ শতাংশ নারীর মাসিক পারিবারিক আয় ২ হাজার ৫০০ টাকার কম এবং ৯ দশমিক ৫ শতাংশের মাসিক পারিবারিক আয় ১০ হাজার টাকার বেশি।
১৪ দশমিক ৭ শতাংশের দাবি, তারা পড়াশোনা এবং চাকরি ক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
জরিপ করা ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারে শিশুরা কোনো না কোনোভাবে বাসায় কিংবা ঘরের বাইরে শারীরিক কিংবা মানসিক শাস্তি বা আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।
একাগ্র প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্র এবং সুশীল সমাজের আরও জোরালো ভূমিকা পালন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিতে মনিটরিং ব্যবস্থা, বাজেট বৃদ্ধি, তথ্যের ঘাটতি পূরণ ইত্যাদি বিষয়ে দাবি জানানো হয়।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি অপরাজিতা হক বলেন, ‘যুবকরা পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। তাদের সঙ্গে নিয়েই সবাই মিলে একত্রে কাজ করার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে এমপি আদিবা আঞ্জুম মিতা বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অগ্রগতি ঘটছে। বাংলাদেশ সরকার নারীবান্ধব সমাজব্যবস্থা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি একটি দেশের নারীদের সার্বিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। নারীদের নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে—এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, একত্রে কাজ করতে হবে।
ডা. মনজুর হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (কৈশোরকালীন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য), এমসিএইচ ইউনিট বলেন, কিশোর-কিশোরীদের উন্নয়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সবার স্বাস্থ্য উন্নয়ন কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। সব সংস্থার সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাদের একত্রে কাজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে এবং কৈশোরকালীন গর্ভধারণের হার কমাতে আমাদের কাজ করতে হবে। এজন্য জন্ম নিবন্ধনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু। আরও বক্তব্য দেন— মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর আয়েশা সিদ্দিকী নার্গিস, উপপরিচালক (ইনোভেশন) মো. আরিফুল হক মামুন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপপ্রধান মো. মুস্তাসিম বিল্লাহসহ অনেকেই।