গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। আজ রোববার সকালে শহরের প্রকৌশলী ভবন মিলনায়তনে ২৮ দফা উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ সিটি করপোরেশন গঠন ছাড়াও নাগরিক সেবায় নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নাগরিকদের হোল্ডিং কর সহনীয় করা, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি সরবরাহ, যানজট নিরসনে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারে নানা উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে।
আজমত উল্লা খান বলেন, তার নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে ইশতেহারে ঘোষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
এ সময় তিনি বলেন, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে ‘পরামর্শক কমিটি/নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি’ গঠন করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সেবার মান বাড়াতে অভিজ্ঞ নগরবিদ ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে বিশ্বমানের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন সনদের ফি, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা এবং ওয়ার্ডগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। হোল্ডিং করের হার না বাড়িয়ে রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে সহনশীল পর্যায়ে চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া সরকার কর্তৃক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রদান করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া স্বল্পমূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া, দুস্থ ও অসহায় মানুষের মৃত্যুর পর প্রয়োজন অনুযায়ী কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে শ্রমিক, বস্তিবাসী ও দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য কার্ড/ লাল কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে জিসিসির অধীনে কারিগরি ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। নগরীতে অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোয় সাহায্য প্রদান করা হবে। এ ছাড়া অনাথ, গরিব, যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব পাঠাগারের আধুনিকীকরণ, নতুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারগুলোকে সহায়তা প্রদান করা হবে। পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ভাইবোনদের অধিকার সংরক্ষণে ও নির্যাতন প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটর করা হবে। শ্রমজীবী মায়েদের শিশুদের পরিচর্যার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং বিকেল ৫টার পর তারা যেন টিসিবির সরবরাহকৃত খাদ্যসামগ্রী পেতে পারেন, সেই উদ্যোগসহ সরকার ও মালিকপক্ষের সহযোগিতায় বেতন-ভাতাদি, নিরাপত্তা, বাসস্থান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সহায়তা প্রদান করা হবে। গাজীপুর মহানগরীর বস্তিবাসীর প্রাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে জিসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে হেল্প ডেস্ক তৈরি করা হবে।
আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, তরুণদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এবং একই সঙ্গে বয়স্ক ও শিশুদের মিলনস্থল ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘ওয়ার্ড সেন্টার’ নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সেগুলোতে কমিউনিটি সেন্টার, সেবাদান কেন্দ্র, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিল্পকলা শিক্ষাকেন্দ্র, পাঠাগার প্রতিষ্ঠাসহ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী করা হবে। ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরির মাধ্যমে নাগরিক সেবা ও নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্মার্ট নেইবারহুড কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত পাড়া উৎসবসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন এবং থ্রি-আর পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বর্জ্যকে জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে বর্জ্য ও দুর্গন্ধমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৮ জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ২৪৭ জন কাউন্সিলর ও ৭৯ নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।