রংপুরের গঙ্গাচড়ার বিভিন্ন এলাকা এখন বালুমহালে পরিণত হয়েছে। নদীর চরগুলো এখন বালুখেকোদের দখলে। তিস্তা ও ঘাঘট নদীর বুক থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার বালু তুলছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। এসব বালু জেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মাণাধীন স্থাপনা ও খাল ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকায় নদী-প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে নদীতীরবর্তী সেতুসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। অবৈধ বালু বাণিজ্যে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। গত রোববার ঘাঘট নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগে আলমবিদিতর ইউনিয়নের দুটি পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিন ও পাইপ ধ্বংস করা হয়েছে। আসামি পলাতক থাকায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
সম্প্রতি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির দায়ে দুই ভাইয়ের ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া উত্তোলন করা বালু পরিবহনে ব্যবহৃত দুটি ট্রলি আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করে স্থানীয় সচেতন মানুষ দাবি করেছেন তিস্তা নদীতে সরকারিভাবে বালুমহাল তৈরি করে অবৈধ বালু বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। এটা সম্ভব হলে নদীকেন্দ্রিক বালু উত্তোলন থেকেই রাজস্ব আয় দ্বিগুণ হবে।
তিস্তা নদীবেষ্টিত গঙ্গাচড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বালু বাণিজ্যের উৎসব। তেমন নজরদারি না থাকায় নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে শ্যালো মেশিন বসিয়েছে অসাধু বালু ব্যবসায়ী চক্র। কেউ কেউ আবার শুকনো চর থেকে কোদাল ও বেলচা দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে মৎস্য প্রকল্পের নামে চলছে খাল খনন। সেখান থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতু থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শ্যালো মেশিন মালিক ভুট্টু মিয়া বলেন, মসজিদের কাজের জন্য বালু তোলা হচ্ছে। এটা বিক্রি করা হবে না। আমি প্রায় তিন মাস ধরে এখান থেকে বালু উত্তোলন করছি, কেউ কিছু বলেনি। ভুট্টুর দাবি, উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি নিয়ে তিনি বালু উত্তোলন করছেন।
তবে স্থানীয়রা জানান, ভুট্টু মিয়া বালু ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করে আসছেন। তাদের দাবি, তিস্তা নদী এলাকার মহিপুর তিস্তা ব্রিজের নিচে, গান্নারপাড়, ধামুর বোল্লারপাড়, দক্ষিণ কোলকোন্দ সিংগীমারী, দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রেয়েন বাঁধ, দক্ষিণ কোলকোন্দ বাবুপাড়া, পাইকান ব্যাঙপাড়া, পাইকান পীরপাড়া, উত্তর চিলাখাল, পূর্ব ইচলী ও মধ্য ইচলী এলাকায় বালু উত্তোলন হয়ে থাকে। ৪০ থেকে ৫০ জন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে তারা জানান, বেশিরভাগই বিভিন্নভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে এ অবৈধ ব্যবসা করছে।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেংডোবা এলাকার ইয়াছিন আলী ওরফে ইয়াছিন মাকরা ওই এলাকার তিস্তা বাঁধের ধার থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা নিজের ট্রলিতে বহন করে দুই ছেলেকে দিয়ে বিক্রি করে আসছিল। প্রতিদিন বালুর ট্রলি চলাচলের কারণে এলাকার রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন কুমার সাহা চেংডোবা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ট্রলিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় ইয়াছিন মাকরার বালুসহ দুটি ট্রলি এবং তার দুই ছেলে কামাল মিয়া ও জামাল মিয়াকে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দুই ভাইয়ের ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এরশাদ উদ্দিন বলেন, এর আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের দায়ে পাইকান ডাক্তারপাড়া গ্রামের হামিদুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।