শ্রীমঙ্গলের টি রিসোর্টের একটি ভবনে চার কামরার ‘জাদুঘর’। এখানে জমা রয়েছে দেশের প্রায় দেড়শ বছরের চা চাষের জানা-অজানা অনেক ইতিহাস। কী নেই এই সংগ্রহশালায়? প্রাচীন যুগের চা সংগ্রহের যন্ত্র, ব্রিটিশ আমলের বাগান ও অফিসে ব্যবহৃত যন্ত্র, বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ—যেন শত বছরের ইতিহাসই এই চার কামরায় গুছিয়ে রাখা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের ‘টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম’-এর জন্ম ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দিকে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পাকা সড়ক ধরে দুই কিলোমিটার এগোলেই এই চা জাদুঘর। চা বাগান ঘেরা এ জাদুঘরে দেশের চা-শিল্পের প্রায় দেড়শ বছরের ইতিহাস ফুটে উঠেছে নানা সংগ্রহে-স্মারকে। তবে প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পার হলেও বাড়েনি এর পরিধি। এখনো বন্দি চা-সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিত্যক্ত ভবনের সেই ছোট চার ঘরেই।
পাহাড়ি সড়কের ধার-ঘেঁষা টিলার ওপর ছড়িয়ে থাকা জাদুঘরের টিনশেড ঘরগুলোর প্রথমটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল এক ছবি। খালি চেয়ার-টেবিলের পেছনে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালি।
১৯৫৭-৫৮ সালে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সে সময় শ্রীমঙ্গল নন্দরানী চা বাগানে এসেছিলেন তিনি। তখন যে চেয়ারে বসে মিটিং করেছিলেন, সেটিও সংরক্ষিত আছে এই সংগ্রহশালায়। চাগাছ দিয়ে বানানো হয়েছে জাদুঘরের নানা আসবাবপত্র। সেগুলোর সঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে সংগ্রহশালাটির সব আকর্ষণ।
এই জাদুঘরে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সামগ্রী। এখানে দেখা মেলে প্রাচীনকালের চা সংগ্রহের চয়নযন্ত্র, খস্তি, বাগানের কাদা পরিষ্কারের জন্য লোহার পাপোশ, ব্রিটিশদের হাতের লাঠি, কাটা কোদাল, তৎসময়ে চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত গহনা, ছেওরাছাড়া চা বাগানের প্রাচীন মুদ্রা, ব্রিটিশ আমলের রেডিও, নয়াপাড়া চা বাগান থেকে সংগ্রহ করে এনে রাখা জীবাশ্ম, ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত কেরোসিন চালিত ফ্রিজ, চা বাগান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বিমানের ধ্বংসাবশেষ। এ ছাড়াও আছে ব্রিটিশ আমলের যান্ত্রিক লাঙল, পানির ফিল্টার, ব্রিটিশদের ব্যবহৃত টেলিফোন সেট, টাইপ রাইটার, লিফট পাম্প, জরিপ শিকল, টারবাইন পাম্প, এমনকী ব্রিটিশ আমলের সার্ভিস বুকও।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শত বছরের প্রাচীন এই নিদর্শনগুলো তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই মিউজিয়ামের উৎপত্তি।’ তবে এলাকাটি পর্যটকদের জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে জানান এ কর্মকর্তা।