প্রদীপ মোহন্ত, বগুড়া
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:৩৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ছড়িয়ে পড়ুক হিরার দ্যুতি

ছড়িয়ে পড়ুক হিরার দ্যুতি
দুনিয়ার আলো দুচোখ ভরে কোনোদিন দেখা হয়নি মিফতাহুল জান্নাত হিরার। তবে শিক্ষার আলোয় পূর্ণ করেছেন হৃদয়। এবার সেই আলো ছড়িয়ে দেওয়ার পালা। সেই মহান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে জান্নাত হিরা বললেন, ‘প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। যথাযথ সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে অনেকেই স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হতে পারেন।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েরমাস্টার্সে অধ্যয়নরত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মিফতাহুল জান্নাত হিরা বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার পশ্চিমপাড়ার আব্দুস সাত্তারের মেয়ে। গত মঙ্গলবার নিজ উপজেলার বিহার কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দিয়েছেন। এ সময় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজমল হোসেনসহ অন্য শিক্ষকরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। চাকরি পাওয়ায় অনেক আনন্দিত জানিয়ে হিরা বলেন, ‘দৃষ্টিহীন মানুষ বলে যদি কোনো অবহেলার শিকার না হই, তাহলে শিক্ষকতা করা সম্ভব।’ তিনি চাকরির ক্ষেত্রে সবার সহযোগী মনোভাব প্রত্যাশা করেন। মিফতাহুল জান্নাত হিরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে অনার্স করায় ২০২১ সালে জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী তাকে পুরস্কৃত করেন। চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। হিরার মতো তার বড় দুই বোন লাভলী খাতুন ও রেশমা খাতুনও জন্মের পর থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। চোখে না দেখলেও কারও ওপর নির্ভরশীল নন তারা। লাভলী খাতুন স্নাতক শেষে একটি প্রকাশনীর ব্রেইল পদ্ধতির বই লিখে দেন ঘরে বসে। মিফতাহুল জান্নাত হিরা বলেন, মাধ্যমিক পর্যন্ত তার লেখাপড়ায় এবিসি নামে একটি বেসরকারি সংস্থা সহায়তা করলেও উচ্চশিক্ষায় তারা আর এগিয়ে আসেনি। পারিবারিক উদ্যোগেই তিনি ২০১৪ সালে বগুড়া সরকারি মজিবুর রহমান মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন জিপিএ ৫ পেয়ে। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির আবেদন করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে বিশেষ ব্যবস্থায় লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর মৌখিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজমল হোসেন বলেন, এমন প্রতিভার এক নারীকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত। তার সার্বিক বিষয়ে আমরা খেয়াল রাখব। বগুড়ার সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাবেদ আহম্মেদ বলেন, বগুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে মিফতাহুল জান্নাত হিরা একমাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী। তিনি গত মঙ্গলবার সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেছেন। বগুড়া জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম কাওসার রহমান বলেন, বগুড়ায় সরকারি কোনো অফিসে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কর্মকর্তা-কর্মচারী এতদিন ছিলেন না। মিফতাহুল জান্নাত হিরা নামে একজন নারী এ প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি অনেক আনন্দের খবর।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই

রাকসু নির্বাচন : ৬ দাবি ছাত্রদলের

পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

সাজেক থেকে ক্যাম্পাসে ফেরা হলো না খুবি ছাত্রীর

ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ ৩৮ বাংলাদেশির সন্ধান মিলেছে

বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উদ্ধার

এশিয়া কাপে পাকিস্তানি ফিল্ডারের থ্রোয়ে আহত আম্পায়ার

‘ভুল করে মায়ের পাসপোর্ট নিয়ে জেদ্দায় যান পাইলট মুনতাসির’

শাহীনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সুপার ফোরে পাকিস্তান

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ

১০

এশিয়া কাপে পাকিস্তান ওপেনারের লজ্জার রেকর্ড

১১

চট্টগ্রামে আ.লীগ কর্মীদের বাসা ভাড়া না দিতে মাইকিং

১২

ভারতে ‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’ সংক্রমণে ১৯ জনের মৃত্যু

১৩

বনানীতে দুই শিসা বারে ডিএনসির অভিযান

১৪

বয়কটের হুমকি দিয়েও না করার কারণ জানালেন পিসিবি প্রধান

১৫

কর্মচারী দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা পরিচালনার অভিযোগ

১৬

শাহীন ঝড়ে বাঁচা-মরার ম্যাচে লড়াকু সংগ্রহ পাকিস্তানের

১৭

‘গোলাপী খালার’ পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

১৮

পরাজিত শক্তির সঙ্গে আঁতাতের রাজনীতি মঙ্গলজনক হবে না: নীরব

১৯

চট্টগ্রামে মার্কিন বিমান ও সেনা উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনার কারণ কী?

২০
X