সম্পাদক ও প্রকাশক : সন্তোষ শর্মা । বিভাগীয় প্রধান (অনলাইন): পলাশ মাহমুদ
কালবেলা মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স, ৪৪/১, রহিম স্কয়ার, নিউমার্কেট, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং ২৮/বি, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা, শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত।
সাত বছর ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছেন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ইয়াসমিন বেগম। এখন বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে সম্প্রতি থানা শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে তাকে ঢাকা স্থানান্তরের জন্য স্বজনদের পরামর্শ দেন। সেখান থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হার্ট (হৃৎপিণ্ডে) জটিলতা শনাক্ত হয় তার। জরুরি অপারেশন করে রক্তনালির ব্লক সরানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইয়াসমিন বেগমের কিডনি সমস্যা। অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করা হলে তিনি কিডনি বিকল হয়ে মারা যেতে পারেন। ফলে চিকিৎসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানান, কিডনি রোগীরা পাঁচটি স্তরে থাকেন। ইয়াসমিন বেগম চতুর্থ পর্যায়ে আছেন। বর্তমানে তার দুটি কিডনি ২৩ এমএল প্রস্রাব তৈরি করতে পারে। যা সাধারণ মানুষের হয়ে থাকে ৯০ এমএল। আর একধাপ বিকল হলে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়ে পড়বে।
এ পরিস্থিতিতে মায়ের জীবন বাঁচাতে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েন ছেলে ইমদাদ ও মেয়ে শামিমা আক্তার হ্যাপি। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে তারা। এর মধ্যে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ডাক্তার মহসীন আহমদ তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমস্যার সমাধানে পথ দেখান। তবে ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন হওয়ায় তিনি তার সুদক্ষ টিম নিয়ে কয়েক দফা সভা করেন। পরবর্তীতে স্বজনদের সম্মতিতে গত ৭ নভেম্বর দুই ঘণ্টার বেশি সময়ের সফল অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মহসীন আহমেদের ১৫ সদস্যের দল। তবে এতে ব্যবহার করা হয়নি কিডনির জন্য ক্ষতিকর হার্ট চিকিৎসায় অতি প্রয়োজনীয় ‘কনট্রাস্ট ডাই’ (হৃৎপিণ্ডের অভ্যন্তরের বিশেষ ক্যামেরা পাঠানের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ)। এ ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করেন চিকিৎসক মহসীন আহমদ।
বাংলাদেশে বিরল এই চিকিৎসার সফলতার খবর পেয়ে দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদক হাসপাতালে গিয়ে রোগীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছে। ইয়াসমিন বেগমের কাছে গেলে তিনি প্রতিবেদককে প্রথমে হাসপাতালের কর্মকর্তা মনে করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে কিডনির ডাক্তারের কাছে গেছে। কিছু বলার থাকলে আমাকে বলেন।’ ওই সময় তিনি নিজের বিছানায় বসে পাশের বিছানায় থাকা রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তাকে খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। অপারেশনের কথা জিজ্ঞেস করতেই স্বস্তির দম ছেড়ে বলেন, ‘আল্লাহ রক্ষা করেছে। ডাক্তার বাবারা অনেকক্ষণ অপারেশন করেছেন। এখন ভালো আছি।’
কিছুক্ষণ পর কিডনি ডাক্তারের কাছ থেকে মায়ের কাছে ফেরেন ইয়াসমিন বেগমের ছেলেমেয়ে। তারা কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের বাবা নেই। এক রকম অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল মায়ের চিকিৎসা। ডাক্তার মহসীন আহমদের সাহসী উদ্যোগে মায়ের মুখে হাসি ফুটেছে।’ তবে কিডনি জটিলতা থাকায় তিনি কষ্টে আছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে ডা. মহসীন আহমদ কালবেলাকে বলেন, ‘কনট্রাস্ট ডাই’ ছাড়া এঞ্জিওপ্লাস্টি করাই কিডনি রোগীদের সবচেয়ে নিরাপদ চিকিৎসা। একে ‘আল্ট্রা-লো কনট্রাস্ট অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি’ কিংবা জিরো কনট্রাস্ট এঞ্জিওপ্লাস্টি বলা হয়ে থাকে। অনেকটা অন্ধকারে শিকার করার মতো কঠিন চিকিৎসাপদ্ধতি। যা উন্নত বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বেশ কয়েক বছর ধরেই সফলভাবে শুরু করেছেন। এতে অত্যন্ত দক্ষ ইন্টারভেনশন টিম এবং ‘ইন্ট্রাভাসকুলার আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনের’ প্রয়োজন হয়।
মহসীন আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশেও এই পদ্ধতির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আমরা একজন জটিল কিডনি রোগীর হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে রিং স্থাপন করতে পেরেছি। নিয়মিতভাবে এই চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে।’
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
উখিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের
১
বিদেশিদের ষড়যন্ত্র আমাদের রুখতে পারবে না : বাবুল
২
কাভার্ডভ্যানের পেছনে বাসের ধাক্কা, নিহত ২
৩
তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খুবির এমওইউ স্বাক্ষর