সম্পাদক ও প্রকাশক : সন্তোষ শর্মা । বিভাগীয় প্রধান (অনলাইন): পলাশ মাহমুদ
কালবেলা মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স, ৪৪/১, রহিম স্কয়ার, নিউমার্কেট, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং ২৮/বি, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা, শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত।
এডিনয়েড শব্দটি অপরিচিত হলেও সমস্যাটি হরহামেশাই দেখা যায়। অনেক শিশু এডিনয়েড রোগে ভোগে। কিন্তু অনেক বাবা-মা তা বুঝতে পারেন না। আর শিশু তার সমস্যা বুঝিয়ে বলতে পারে না। তবে এই রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা দেখে শনাক্ত করা যায়।
এডিনয়েড রোগ কী?
নাকের পেছনে এডিনয়েড গ্রন্থি থাকে। এটি গঠনগত দিক থেকে টনসিলের মতো। দুটোই মিলিত লিম্ফোয়েড টিস্যু বা লসিকা জাতীয় কোষ, অবস্থান করে নাসা গলবিল ও গলবিল অঞ্চলের ঝিল্লির ঠিক নিচে। ঊর্ধ্বশ্বাসনালি এবং খাদ্যনালির সংযোগস্থলে টনসিল ও এডিনয়েড ছাড়া একই রকম আরও লসিকাগ্রন্থি থাকে, এসব লসিকাকোষ গোলাকার রিংয়ের মতো অবস্থান করে, একে বলা হয় ‘ওয়েল্ডার্স রিং’।
ওয়েল্ডার্স রিংয়ের অন্তর্ভুক্ত এই এডিনয়েড জন্ম থেকেই থাকে। ৩ থেকে ৭ বছরের মধ্যে এটি আকারে সবচেয়ে বেশি বড় হয় এবং ৮ থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে এটি ছোট হতে থাকে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলেই ঘটে বিপত্তি। তখন বিষয়টিকে এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হওয়াজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ
মনে করা হয়ে থাকে বারবার ঊর্ধ্বশ্বাসনালির ইনফেকশন এডিনয়েডের ওপর প্রভাব ফেলে। যার ফলে এডিনয়েড আকারে বড় হয়ে যায়। এছাড়া অ্যালার্জিজনিত কারণেও এডিনয়েড বড় হয়ে যায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এডিনয়েড বড় হওয়ার উপসর্গ
এডিনয়েড গ্রন্থি বেড়ে যাওয়ার কারণে নাকের বাতাস চলাচলের পথ সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ফলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। নাকের পথ যথাযথভাবে খোলা না থাকার নাকের মধ্যে শ্লেষ্মা জমে থাকে এবং নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরতে থাকে। নাকের দুইপাশের সাইনাসে ইনফেকশন হয়। শিশু নাকে নাকে কথা বলে। এমনকি রাতে ঘুমানোর সময় নাক ডাকতে পারে কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসে শব্দ হতে পারে।
কানের সঙ্গে ঊর্ধ্বশ্বাসনালির সংযোগ রক্ষাকারী পথটিকে বলা হয় ইউস্টেসিয়ান টিউব। এর পাশেই থাকে এডিনয়েড। তাই এডিনয়েড বড় হলে ইউস্টেসিয়ান টিউবের পথটি রুদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। ফলে মধ্যকর্ণে শ্লেষ্মা আবদ্ধ অবস্থায় জমে যেতে পারে, কানে ব্যথা হতে পারে এবং অবস্থাভেদে শিশু কানে কম শুনতে পারে। এডিনয়েড বড় হয়ে যাওয়ার কারণে শিশুর নাক বন্ধ থাকে। ফলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়।
এই মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার কারণে শিশুর খাবার গ্রহণে বিলম্ব কিংবা অসুবিধা হয়। এছাড়া শিশুর ঠোঁটের কোণা দিয়ে লালা পড়তে পারে। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলতে থাকলে শিশুর উপরের পাটির সামনের দাঁত উঁচু হয়ে যায়, মাড়ি নরম হয়ে পড়ে, নাক চেপে যায়, সর্বোপরি চেহারায় একটা হাবাগোবা ভাব চলে আসে। সামগ্রিকভাবে এই উপসর্গগুলোর কারণে শিশুর চেহারায় যে পরিবর্তন সূচিত হয় তাকে বলা হয় ‘এডিনয়েড ফেসিস’।করণীয়
ঘন ঘন এডিনয়েডের এ সমস্যা হলে ১২-১৪ বছরেও তা স্বাভাবিক আকারে পৌঁছায় না। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এমন হলে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। তাতেও নিরাময় না হলে অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দিতে হয়।
এডিনয়েড নির্ণয় কি কঠিন বিষয়?
একজন নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ একটি শিশুকে পর্যবেক্ষণ করে, অসুস্থতার ইতিহাস নিয়ে এবং একটি এক্স-রে এবং নাকের এন্ডস্কোপি করার মাধ্যমেই এডিনয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধির বিষয়টি বুঝতে পারেন।
এডিনয়েড সমস্যার চিকিৎসা
এডিনয়েড সমস্যার চিকিৎসা মূলত অপারেশন যদি এডিনয়েড গ্রন্থি বৃদ্ধির বিষয়টিই শিশুর মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া, নাক বন্ধ থাকা ইত্যাদির কারণ বলে গণ্য হয় তখন অপারেশনই হচ্ছে এর একমাত্র চিকিৎসা। সব অপারেশনের মতোই এডিনয়েড অপারেশনে সাধারণ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। তবে অজ্ঞান করে অপারেশন করাতে হয় বলে অজ্ঞান করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
এডিনয়েড অপারেশন কখন করবেন
নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে —
১. যদি নাক প্রায়ই বন্ধ থাকে এবং এক্স-রে করে তার প্রমাণও পাওয়া যায়
২. এডিনয়েড বড় হয়ে যাওয়ার কারণে যদি মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হয় এবং মধ্যকর্ণে তরল পদার্থ জমে আটকে থাকে
৩. যদি বারবার মধ্যকর্ণের ইনফেকশন হয়।
৪. ঘুমের মধ্যে যদি শিশুর দম বন্ধ (স্লিপ এপনিয়া) অবস্থা হয়
অপারেশন পরবর্তী উপকারিতা
অপারেশনের পর শিশু ক্রমেই সুস্থ হয়ে ওঠে, শিশুর নাক বন্ধ অবস্থার উন্নতি হয়। এ সময়ে শিশুকে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। অ্যালার্জি থাকলে অপারেশনের পর শিশুকে অ্যালার্জির জন্য দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ দিতে হবে। অপারেশনের দুই-তিন দিনের মধ্যেই শিশু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে শিশু সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
অপারেশন না করালে শিশুর কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে
গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘদিন ধরে শিশুর নাক বন্ধ থাকার কারণে শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ বিঘ্নিত হয়। ফলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ কম হয়। এছাড়া শিশু ক্রমাগতভাবে কম শোনার কারণে ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে পড়ে, পড়াশোনায় খারাপ করে এবং শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়।
একপর্যায়ে শিশুর মধ্যকর্ণের ইনফেকশন জটিল হয়ে কানের পর্দা ফুটো করে দেয় এবং শিশু কানপাকা রোগের নিয়মিত রোগী হয়ে যায় অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী কানপাকা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
তবে কথা হচ্ছে, নাক বন্ধ হওয়া, কানপাকা, কানে পানি জমা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার আরও অনেক কারণ রয়েছে। সেই সব কারণে সমস্যা হয়ে থাকলে সেগুলোর চিকিৎসা নিতে হবে।
লেখক :
ডা. মশিউর রহমান
এমবিবিএস, এফসিপিএস (ইএনটি)
নাক কান গলা ও হেডনেক বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন।
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
জন্মাষ্টমী : সাংবাদিকদের সাথে পূজা পরিষদের মতবিনিময় বৃহস্পতিবার
১
রাহুল গান্ধীকে হত্যার হুমকি
২
সাদা পাথর উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু
৩
বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে উয়েফা সুপার কাপে
৪
স্বর্ণ পাচারে জড়িত সেই কেবিন ক্রু রুদাবা সাসপেন্ড
৫
ইতালি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ২৬ জনের মৃত্যু
৬
অফিসে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে কী করবেন
৭
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা
৮
হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস
৯
চৌকি কোর্টে অভিযোগের হেল্পলাইন চালু
১০
রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
১১
আ.লীগ পালিয়েছে ভারতে, আপনাদের পালাতে হবে পাকিস্তানে : টিপু
১২
গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায় দুই কর্মকর্তাসহ ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
১৩
জামিন পেলেন বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী
১৪
বাংলাদেশে নিজের বিচার নিয়ে টিউলিপের প্রতিক্রিয়া
১৫
সেনাপ্রধানের নামে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট, আইএসপিআরের সতর্কবার্তা