কানের ভেতর কোনোরকম শব্দ হওয়াকে মেডিকেলের পরিভাষায় টিনিটাস বলে, যা শুধু রোগী নিজে শুনতে পায়। বিরক্তিকর এ সমস্যার বিস্তারিত জানাচ্ছেন স্কয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তাহমিনা অ্যানি
শিশু, তরুণ কিংবা বৃদ্ধ যে কোনো বয়সীদের কানে টিনিটাস হতে পারে। শব্দটি প্রতিনিয়ত অথবা বিরতি নিয়ে হতে পারে। এটা খুবই বিরক্তিকর অথবা সহনীয় প্রকৃতির হতে পারে। কানে শোঁ শোঁ, বাঁশির মতো অথবা নানারকম শব্দ হতে পারে। টিনিটাসের অনেক কারণ রয়েছে, যেমন—কানে ওয়াক্স বা খৈল জমলে, কানের ইনফেকশন, মানসিক চাপ, হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, মাথায় আঘাত, পর্দা ফেটে গেলে, অন্তঃকর্ণের চাপ বৃদ্ধি পেলে, শ্রবণসংক্রান্ত স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কানের ভেতর অস্বাভাবিক তরলীয় চাপ বা মেনিয়ারস রোগ, টিউমার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ও অ্যাসপিরিনের উচ্চ ডোজের কারণেও টিনিটাস সৃষ্টি করতে পারে।
টিনিটাসের পাশাপাশি অন্য যেসব সমস্যা থাকতে পারে তা হচ্ছে—মাথা ঘোরানো, কান বন্ধ লাগা, কানে কম শোনা, কানে ব্যথা ইত্যাদি।
সম্প্রতি দাঁতে কাজ করা হয়েছে কিনা অথবা চোয়ালে ব্যথা করছে কিনা সেটিও জানা প্রয়োজন। যদি মনে হয় যে দাঁত বা চোয়াল সম্পৃক্ত সমস্যার কারণে টিনিটাস হচ্ছে, তাহলে আগে ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
এ ছাড়া মিলের মতো উচ্চশব্দের পরিবেশে কাজ করলে অথবা অতিরিক্ত লাউড মিউজিক শুনলেও টিনিটাসের ঝুঁকি বাড়ে।
অনেক সময় এটা শুধু বিশ্রামেই সেরে যায়। অনেক সময় কিছু আগে থেকে খেয়ে আসা ওষুধ বন্ধ করে দিলেও সেরে যায়। টিনিটাসের স্থায়িত্ব দুই সপ্তাহের বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ও প্রকৃত কারণ শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে হবে।
যাদের কানে ওয়াক্স জমেছে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরিষ্কার করাতে হবে। নিজে নিজে কান পরিষ্কার করা বা কারণ ছাড়াই কানে খোঁচাখুঁচি করা কখনোই উচিত নয়। কানে প্রদাহ হলে ও পর্দা ফেটে গেলে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে।
অনেক সময় শল্যচিকিৎসায় উপকার পাওয়া যায়। স্নায়ু সমস্যায় শ্রবণযন্ত্র বা টিনিটাস মাসকার ব্যবহার করলে শোঁ শোঁ শব্দ অনেকটাই কমে যায়। কিছু কিছু ওষুধ প্রয়োগেও কানের ভেতর হতে থাকা শব্দ কমে যায়। রিলাক্সেশন থেরাপি বা ইয়োগাও অনেক ক্ষেত্রে কাজে দেয়।
খাবার স্বভাবগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, যেমন চা-কফি, কোমল পানীয়, অ্যালকোহল, চকলেট ইত্যাদি ও ধূমপান বন্ধ রাখা ভালো। প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি, জিংক, ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে টিনিটাস প্রতিরোধে।