প্রবাসে থাকা বড় মেয়ে শামারুহ মির্জার কাছ থেকে শুভাশীষ পেয়ে দিনের শুরু হয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। আজ বৃহস্পতিবার ৭৫ বছর পূর্ণ করে ৭৬-এ পা রাখলেন মির্জা ফখরুল। ১৯৪৮ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জন্মদিন মানে আরও একটি বছর চলে যাওয়া। বৃদ্ধ থেকে বৃদ্ধের পথে যাচ্ছি। সকালে দুই মেয়ের টেলিফোনে ঘুম ভেঙেছে আমার। দুই মেয়ে আর আপনাদের ভাবির (সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম) শুভেচ্ছায় দিন শুরু করেছি। আমার বড় মেয়েই প্রথম ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বলল।
তিনি বলেন, আমার কাছে এখনকার জন্মদিন নিদারুণ কষ্টের। কারণ আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী গণতন্ত্রের মাতা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি, এখন গৃহে অন্তরীণ হয়ে আছেন। নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণায় দিনযাপন করছেন। এ রকম একটা অবস্থায় জন্মদিন নিয়ে কী বলার আছে? পা রাখলাম ৭৬-এ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় ভাড়া বাসায় থাকেন। সকালে তার সহধর্মিণী ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ জানিয়েছেন। একসঙ্গে তারা সকালে ব্রেকফাস্ট করেছেন, চা খেয়েছেন। পরে বাসা থেকে নিজের প্রাইভেটকারে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি মহাসচিব। পথে অনেক নেতা টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে জানান।
নয়াপল্টনে আসার পর দলের নেতাকর্মীরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জন্মদিনের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আগেই বারণ করে দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
আমার সময় শেষের দিকে
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সাংবাদিকরা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে মির্জা ফখরুল বলেন, ধন্যবাদ, আমাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে আমার সময় প্রায় শেষের দিকে। একটা ছোট গোলাপ দিলে ভালো হতো—এ রকম বলেন পাশে বসা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম। মির্জা ফখরুল বলেন, না, না; প্লিজ এটা করবেন না।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ওয়ান হান্ড্রেড টু নট আউট। দেখছেন ছবিটা! এই ছবিটা সকলকে দেখতে বলব। ইটস এ ওয়ান্ডারফুল মাস্টার পিস পিকচার। আমাদের মতো মানুষদের এই জীবনকে পজিটিভলি নেওয়া, এটা এত চমৎকারভাবে এই ছবিতে উঠে এসেছে। অনেকে আছেন না বৃদ্ধ হয়ে যায়, মরার আগে মরে যান। তো, ওটাকে নেগলেক্ট করে ১০২ বছরের বৃদ্ধ সে জীবনকে উপভোগ করেতেছে, এটা দেখার মতো। সকলেরই এই ছবি দেখা উচিত।
মির্জা ফখরুলের বড় মেয়ে শামারুহ মির্জা স্বামী-সন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ছোট মেয়ে সাফারুহ মির্জা ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
মির্জা ফখরুলের বাবা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন (চখা মিয়া) মুসলিম লীগের নেতা ও মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মির্জা ফখরুল ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি।
ঢাকা কলেজসহ কয়েকটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন ফখরুল। সরকারি চাকরি ছেড়ে আশির দশকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি।
২০০১ সালে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে চারদলীয় জোট সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল ও কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মির্জা ফখরুল।
মহাসচিব হওয়ার আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন ফখরুল। এই পদটি সৃষ্টি করা হয়েছিল তারেক রহমানের জন্য। তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর ওই পদে মির্জা ফখরুলকে আনেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০১১ সালে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হন মির্জা ফখরুল। ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মহাসচিব তিনি।