আবেদ খান
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩, ০৯:০৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা : আমরাও প্রস্তুত

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা : আমরাও প্রস্তুত
দৈনিক কালবেলায় গতকাল প্রকাশিত ‘আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে, প্রস্তুত সরকার’ শীর্ষক প্রধান প্রতিবেদনটি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। অনেকে প্রতিবেদনটির সোর্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, অসমর্থিত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য এবং সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটের আলোকে এই বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন মহলের আলোচনা এবং সমালোচনার মাধ্যমে প্রতিবেদনটির যথার্থতা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আমি মনে করি, প্রতিবেদনটি সময়োচিত এবং বস্তুনিষ্ঠ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে বহুদিন ধরেই বিভিন্ন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। অর্থাৎ এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। সম্প্রতি রাশিয়ার ওপর তারা একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিনিরা কখনোই আমাদের বন্ধু ছিল না। একাত্তরে ওরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং পাকিস্তানকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা, ধর্ষণ, গণলুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগে মদদ দিয়েছে। যুদ্ধের শেষ দিকে তারা পাকিস্তানের বিজয়কে নিশ্চিত করতে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া এবং ভারতের হুমকির কারণে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। স্বাধীনতার পর তারা বঙ্গবন্ধুকে ব্যর্থ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য নতুন আঙ্গিকে নানামুখী চক্রান্ত শুরু করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের বিদেশি শত্রুর তালিকায় ছিল তিনটি নাম। তাদের অন্যতম হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অন্য দুজন হলেন চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দে ও ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট উয়েন ভান থিউ। যে কোনো উপায়ে এই তিনজনকে উৎখাত করাই ছিল কিসিঞ্জারের লক্ষ্য। এই তিনজন বরাবরই কিসিঞ্জারের পরিকল্পনা বানচাল করে দিচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে আবার বঙ্গবন্ধুর ওপর কিসিঞ্জারের রাগ ছিল একটু বেশি। এ কারণে যে, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে চীন-মার্কিন সুসম্পর্কের সম্ভাবনাকে প্রায় অনিশ্চিত করে তুলেছিলেন। ওই সময় চীনের সঙ্গে মার্কিনিদের সম্পর্কের দূতিয়ালির ভূমিকায় ছিল পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এই দূতিয়ালির কাজে ভাটা পড়ে। তাই প্রতিশোধপরায়ণ কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে উৎখাত করার নীলনকশা তৈরি করেন। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রেখে তার সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব নয়—এ বিষয়ে হেনরি কিসিঞ্জার তথা পাক-মার্কিন ষড়যন্ত্রকারীদের মনে কোনো রকম সন্দেহ ছিল না। তাই তারা বিষয়টি মাথায় রেখেই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাদের নীলনকশা অনুযায়ী পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। আমাদের সংগৃহীত তথ্যাদি প্রমাণ করে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যে আন্তর্জাতিক দুষ্টচক্র কাজ করেছিল তাদের প্রধান ছিল মাকিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ। এই আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীর দলই বাংলাদেশে তাদের কৃতদাসদের দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক, সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এর উদ্দেশ্য একটাই—বাংলাদেশের পালের হাওয়াকে অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের তল্পিবাহক করা। কিন্তু চক্রান্তকারীদের এ উদ্দেশ্য যে পুরোপুরি সফল হয়নি। তাই এখন তারা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে নতুন করে চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এর আগে আমরা লক্ষ করেছি যে, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূতরা বরাবরই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মার্কিনিদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন, তাকে আমি সঠিক বলেই মনে করি। প্রধানমন্ত্রীর এই অবস্থান জাতি হিসেবে আমাদের জন্য সম্মানের। এটা আমাদের জাতীয় সক্ষমতা অর্জনেরও একটি সুযোগ। তাই আমি মনে করি, মার্কিনিদের এই চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে দেশবাসীর উচিত প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকা। জাতীয় স্বার্থে তাকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক মানুষের একান্ত দায়িত্ব। এই লক্ষ্যে দেশের সব অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উচিত মার্কিনিদের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এতে আমাদের জাতীয় ঐক্য দৃঢ় হবে; নস্যাৎ করা সম্ভব হবে সব ধরনের ষড়যন্ত্র। আর ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকসু ভবনকে ‘ভাতের হোটেল’ ঘোষণা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের

৭ দিন ধরে খোঁজ মিলছে না এসএসসি পরীক্ষার্থী রিয়ামনির

আট মামলার আসামিকে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

রাসিকের ৮০৬ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

চাল না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে : আব্দুল হালিম

গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ

আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. ইউনূস

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, কেয়ারটেকারকে ঘিরে সন্দেহ

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

১০

শাহজালাল বিমানবন্দরে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় ৬ নির্দেশনা

১১

খালসহ ১০টি জলমহাল উন্মুক্ত করলেন খুলনার জেলা প্রশাসক

১২

৩০ আগস্ট ইতালির প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন

১৩

জুলাই শহীদদের স্মৃতি স্মরণে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন

১৪

বছর ঘুরে ফিরল সেই জুলাই 

১৫

৩৬ জুলাই বিপ্লব ও নির্মম নির্যাতনের মধ্যেও বেঁচে ফেরার গল্প

১৬

৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ / এস আলম পরিবারের তিন সদস্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে দুই মামলা

১৭

খুবির দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকে কটাক্ষের অভিযোগ

১৮

রাজশাহীতে ঐতিহাসিক ‘সান্তাল হুল’ দিবস উদযাপন

১৯

২৯৫ জন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করল চসিক

২০
X