রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রভাব বাড়ছে : এই প্রবণতা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়
সম্পাদক ও প্রকাশক : সন্তোষ শর্মা । বিভাগীয় প্রধান (অনলাইন): পলাশ মাহমুদ
কালবেলা মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স, ৪৪/১, রহিম স্কয়ার, নিউমার্কেট, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং ২৮/বি, টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা, শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত।
রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রভাব বাড়ছে : এই প্রবণতা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়
দেশের রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের ক্ষমতা ও আধিপত্য ক্রমেই বাড়ছে। স্বাধীনতার আগে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য ছিলেন ৪ শতাংশ। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ হার ছিল ১৩ শতাংশ। এরপর ’৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছিল ৩৪ শতাংশ, ’৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮ শতাংশ, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫১ শতাংশ, এবং ’০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৩ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করা। অধিকাংশ ব্যবসায়ীই তাদের যেসব ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, সেখানে সামষ্টিক কল্যাণের ব্যাপারটি মুখ্য থাকে না। মুখ্য থাকে তাদের নিজের লাভ-লাভের বিষয়ে। তাই ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল দেশের রাজনীতিতে একটা বড় প্রবণতা হয়ে উঠেছে। সেই সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সম্প্রতি এক জনসভায় বলেছেন, রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের পকেটে। বর্তমান বাংলাদেশ রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ ইতিহাসের যে কোনো সময়ের থেকে বেশি। সোমবার কালবেলায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদে রাজনীতিকের চেয়ে ব্যবসায়ীর সংখ্যাই বেশি। তারাই এখন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এর ফলে তারা নিজেদের ব্যবসায়ী স্বার্থে নানা ধরনের আইন পাস করেন এবং নানাভাবে সরকারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করেন।
আমরা জানি, রাজনীতি হলো একটা দেশের চালিকাশক্তি। রাজনীতিকদের দায়িত্ব দেশকে গড়ে তোলা। উন্নত ও সমৃদ্ধির পথে চালনা করা। দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করাই হলো তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। সেই রাজনীতিতে যখন ব্যবসায়ীর আধিপত্য বেড়ে যায়, তখন পরিস্থিতিকে অশনিসংকেত বলেই বিবেচনা করতে হয়। সেই অশনিসংকেত রাজনীতির জন্য তো বটেই, একই সঙ্গে দেশের নাগরিকদের জন্যও। কেননা সব মানুষের জীবনই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দ্বারাই প্রভাবিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ঢুকে পড়েন এবং তাদের ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসাও বাড়ে। তারা প্রথমে অর্থায়ন করেন, পরে নানা সহযোগিতার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলে প্রবেশ করেন। আবার তারাই সংসদ সদস্য হন।
আমরা জানি, রাজনীতির এ বাণিজ্যিকীকরণ শুধু রাজনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না। সমাজে তৈরি করে নানা অস্থিরতা, বৈষম্য ও বিভিন্ন অশুভ তৎপরতা। ফলে সমাজের সংহতি বিনষ্ট হয়। সেইসঙ্গে নষ্ট হয় সমাজের সুষ্ঠু, সুন্দর, মানবিক মূল্যবোধের প্রবাহ।
আমরা মনে করি, রাজনীতিতে ব্যবসায়িক শ্রেণির অনুপ্রবেশের এ প্রবণতা স্বাভাবিক নয়। সাধারণ মানুষ ও দেশের জন্যও শুভ লক্ষণ নয়। রাজনীতির উদ্দেশ্য সর্বাগ্রে জনস্বার্থের কল্যাণ আনয়ন আর ব্যবসায়ীরা সাধারণত দেখেন নিজ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ। তাই রাজনৈতিক ক্ষমতা রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণেই থাকা উচিত। রাজনীতি ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ব্যবসা যেন রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সেই পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। আমরা চাই, যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হোক। সে জন্য প্রথমে দরকার রাজনীতিকে জনকল্যাণমূলক আদর্শের ধারায় প্রবাহিত হতে দেওয়া।
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
ঘন কুয়াশায় ৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল শুরু
১
উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আ.লীগের ২ নেত্রী
২
ব্রাজিলে বিমান বিধ্বস্ত, সব আরোহী নিহত
৩
আজ বন্ধ থাকবে ঢাকার যেসব সড়ক
৪
বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার বাতাস আজও ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
৫
জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ কিশোর আরাফাত হুসাইন মারা গেছেন
৬
কুমিল্লায় মধ্যরাতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিহত ৩