যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আবারও ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মঞ্চের সমন্বয়কারী ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।
নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ‘দেশব্যাপী আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন-নির্যাতন, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আমরা ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
সরকারের পতন আন্দোলন প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘কিছু বিভ্রান্তি আমি দূর করতে চাই। এ রকম না যে, আপনি আজকে বললেন, কালই একটা অভ্যুত্থান হয়ে গেল। আন্দোলনও গড়ে তুলতে হয়। আন্দোলনকে ধীরে ধীরে তার পরিণতিতে নিজের জায়গায় নিতে হয়। সেটা হয়তো এক দিনে হয় না। তখন কী রকম হয় কর্মসূচির, রিপিটেশন হয়। আজকে যে কর্মসূচি করি, হয়তো ১০ দিন পরে একই কর্মসূচি থাকে। কিন্তু সেই কর্মসূচিতে আজকের চাইতে বেশি দৃঢ়তা, আরও বেশি লড়াকু মনোভাব থাকে।’
মান্না আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, আমাদের কর্মসূচি চলবে। ৪ তারিখ আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করব। ওই যে বলেছি, এই দিনকে নিয়ে যাব সেই দিনের কাছে—যেদিন আমাদের বিজয়ের দিন। আমি মনে করি, এই বছর এই সরকারের পতন হবে।
‘গণতন্ত্র মঞ্চ একটা কথা স্পষ্ট ঘোষণা করেছে, আমরা কেবল একদলকে সরিয়ে আরেক দলকে ক্ষমতায় বসাবার লড়াই করছি না। আমরা মানুষের ভাগ্য বদলের লড়াই করছি, আমাদের প্রশাসন বদলের লড়াই করছি। আমরা এ দেশকে গুণগতভাবে একটা উন্নত দেশ বানাতে চাই। এজন্য আমরা ১৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এই ১৪ দফার ভিত্তিতে ৪ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ হবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব। এরই মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ইশতেহার কী হবে—এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কথাবার্তা হয়েছে। আশা করি, সম্ভব স্বল্পতম সময়ে আমরা দেশ ও জনগণকে রক্ষা করবার জন্যে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করতে পারব।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘পায়ের তলায় মাটি নেই—এটা অবশ্য তারা (সরকার) বুঝেন। যার ফলে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে কীভাবে ভয়ে কম্পমান হয়ে গেল—গ্যাটাবো কায়দায় দলের নেতৃবৃন্দ, বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করলেন, বিএনপির মহাসচিবকে পর্যন্ত বাড়ি থেকে তুলে আনল।’
তিনি বলেন, ‘সরকারবিরোধী দলের আন্দোলনে নানাভাবে বিভক্তির সৃষ্টি করবে, নানা বিভ্রান্তি ছড়াবে। আমরা যেন তার ফাঁদে না পড়ি। রাজনৈতিকভাবে একটা পরিণত চিন্তা হবে—সরকারের এসব নানা রকম কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবে সাহায্য না করা, রাজনৈতিকভাবে সরকারের ষড়যন্ত্রকে কীভাবে উন্মোচন করতে পারি—সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে এবং সেই লড়াই যদি আমরা করতে পারি, দেশে অতি দ্রুত জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে।’
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, ‘আজকে তারা (সরকার) উন্নয়নের কথা বলেছে, উন্নয়নের ফানুস এখন ফুটো হয়ে গেছে। গতকালকে (মঙ্গলবার) পত্রিকায় এসেছে—বিএসএমএমইউ একটা গবেষণা করে দেখিয়েছে, দেশের ১২% জেলায় এবং ৫৯% উপজেলায় এক্স-রের সুবিধাটা নাই, ৪২% উপজেলায় রক্ত পরিসঞ্চালন সেবা নাই। তাহলে এই উন্নয়ন দিয়ে কী হবে যেখানে আমাদের জনগণ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা পায় না, যেখানে আমাদের দেশের তরুণদের কর্মসংস্থান নাই, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বেকার উৎপাদনের কারখান—সেখানে এই উন্নয়ন দিয়ে কী হবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে আওয়ামী লীগ উল্টোপথে চলছে। তাদের কাছ থেকে এ দেশের মানুষের অধিকার আজকে আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এই সরকারকে হটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে এবং মোমিনুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, হাবিবুর রহমান রিজু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসিব উদ্দিন হাসান, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, সিরাজ মিয়া, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান বক্তব্য দেন।
বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকালে বিক্ষোভ সমাবেশের একই কর্মসূচি পালন করে বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য। কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কবাদী-লেলিনবাদী) সাধারণ সম্পাদক বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যের হারুন চৌধুরী, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুন আল রশিদ বক্তব্য দেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে কর্মসূচির সমাপ্তি টানেন।